ব্যথিত হৃদয় বেঞ্চের পরে একা বসে সমাহিত,
বাবার সঙ্গে কাটা ছেলেবেলা স্মৃতিপটে উপনীত l
সকাল সন্ধ্যা পড়া আর পড়া লাগতো না মোটে ভালো
রাসভারী তিনি,রাগলে আমার আঁধার দিনের আলো
ছুটে গিয়ে কেঁদে বলতাম মাকে,"দেখতে পাচ্ছ মা?
বেলা চলে যায়,পড়ছি শুধুই,একটু খেলবো না?"
পরে স্মিত হেসে বাবা কাছে ডেকে বলতেন"ছিঃ বাবা,
একটু বকলে অত রাগ করে!মুখ করে হাবাগোবা!
বাবা আমার,রাগ করে না,আমার কথা শোন,
একবার এই দিনগুলো গেলে ফিরে পাবি না তখন l
জেনো জীবন গড়ার শাশ্বত বানী এটাই চিরন্তন,
জীবন তোমায় হাসাবে কাঁদাবে,বাট্ দ্য শো মাষ্ট গো অন l"


তখন আমার কলেজ জীবন আজও স্মৃতিগুলি তাজা,
সংসার ভার,মায়ের অসুখ,আমার পড়ার বোঝা,
হাতে গোনা তাঁর মাসিক বেতন খরচ চালানো ভার,
অফিসের পর টিউশন তিনি ধরলেন গোটা চার l
দিন প্রতিদিন হাড়ভাঙা শ্রম, চলতেন কায়ক্লেশে,
যদি বলতাম,"কিছু করি আমি?"বলতেন স্মিত হেসে
"রয়েছি তো আমি!তোমার দেখছি পড়ায় ঝোঁকটা কম
মনযোগ দাও পড়ায়,এসব ভাববে না একদম l
পড়াশোনা কর,জীবনটা গড়,দশের একজন হও,
সার্থক হবে আমার প্রয়াস,সকল প্রত্যাশাও l
যতই আসুক বিঘ্ন জীবনে,ভেবো না সর্বক্ষণ
দুঃখ কষ্ট নিয়েই জীবন,বাট্ দ্য শো মাষ্ট গো অন l"


কেতাদুরস্ত নগর জীবনে কর্মব্যস্ততার
অজুহাতে খোঁজ নেওয়া কম হত আজকাল বাবার l
দায়ভার শুধু অর্থমূল্য,ঋণ শুধতে চাই,
অসহায় বাবা একা পড়ে কোনো দায়িত্ববোধ নাই,
দূরভাষে কথা হলে বলতেন,"নিজের যত্ন নিও l
কাজের ফাঁকে সময় পেলে একবার ঘুরে যেও l"
হয়নি সময় ঘুরে আসবার,আসেনি সে অবসর,
প্রত্যাশামত এলো একদিন তাঁর শেষ সমাচার l
অসহায় ভাবে একাকী বৃদ্ধ দুদিনের ধুম জ্বরে,
ছেড়ে চলে গেছে,বলেনি কিছুই বড়ো অভিমান করে
দাহ শেষ হয়,বেঞ্চিতে বসে রই হয়ে আনমন,
কানে ভেসে আসে বাবার কথাটা,"দ্য শো মাষ্ট গো অন lll"