কেমন আছো অর্ক-দা?
বহুদিন তোমায় দেখিনা।
মাঝে মধ্যে ফেসবুকে দেখি,
কেমন যেন বদলে গেছো।
রং বাহারী পোশাক পরো,
দারুণ পোজ দিয়ে ফটো ছাড়ো।
কত কবিতা লেখ,
দারুণ দারুণ কবিতা।
খুব ভালো লাগে জানো,
তোমার বদলে যাওয়া তুমিকেও,
আগের মতোই ভালোলাগে।


সেই কবেকার কথা,
তখনও বেসেছিলাম ভালো।
বলতে পারিনি,
দারুণ ভয়ে।
বলতে চেয়েছি অনেক বার,
কিন্তু পারিনি।
তোমার গোমড়া মুখের পানে চেয়ে,
বার বার ভুলে গেছি আমার আবেগ,
আমার ভালোবাসা,
আমার একান্ত এক অনুভূতি।।
নীজেকে তোমার যোগ্য না ভেবে,
দূরে সরিয়ে রেখেছি।
তা ছাড়া তখন তোমার গার্লফ্রেন্ড আছে,
প্রিয়া দি।
প্রিয়া দি কত সুন্দর মিস্টি মেয়ে,
দেখতে ফর্সা,
টিকালো নাখ,
পড়াশোনায় কত ভালো।
আর আমাকে দেখ,
কালো রং এর একটা মেয়ে,
পড়াশোনায় টেনেটুনে।
রুপ নেই গুন নেই,
যে সমাজ কালোকে এত অপমান করে,
সেখানে দাড়িয়ে আমি কিভাবে!!!
সে কস্টের কথা,
তুমি জানবে কিভাবে অর্ক দা।


এরপর সময় এসেছিলো,
একদিন।
তোমার সবে প্রিয়াদির সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে,
অনেক কস্টে আছো তুমি।
আমি শুনেছিলাম,
তোমারই এক বন্ধুর থেকে।
আমার কস্ট হয়েছিল সেদিন,
অনেক কস্ট।
জানো অর্কদা,
সেদিন ভিতরটা কেমন যেন,
উচ্ছলতায় ভরে গেছিলো।
বুঝতে পারছিলাম না,
আসলে আমার চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়া,
দুফোঁটা জল আসলে কিসের!
আনন্দের না দুঃখের!
সেদিন খুব সার্থপরের মতো হেসেছিলাম,
মাঝরাতে দরজা বন্ধ করে।
জানো সেদিন অনেক নেচেও ছিলাম,
তোমার জন্য অনেক কস্ট হচ্ছিল।
আবার তোমাকে পাবার ক্ষীণ আশা,
আমাকে অনেক পরিতৃপ্তি দিয়েছিল।
আশার ঘর বেধে ফেলেছিলাম,
সেই রাতে।
আজ অনেক গুলো বছর পার হয়ে গেছে।
কিন্তু আমি আজও ভুলতে পারিনি অর্ক দা।


একদিন তোমাকে হোয়াটসঅ্যাপ করলাম,
কেমন আছো অর্ক দা?
তুমি বললে খুব ভালো,
আমি তো সবসময় ভালো থাকি।
তোমার উত্তরটা পড়ছিলাম,
আমি জানি তুমি এটাই বলবে,
পড়তে গিয়ে দুফোঁটা জল গড়িয়ে স্কিনে পড়েছিল।
তাই তোমার তুমি কেমন আছো প্রশ্নে,
উত্তর দিতে দেরি হয়েছিল।
তুমি জানো না অর্কদা,
তোমাকে কতটা ভালোবেসে ফেলেছিলাম।
তোমার হা করাতেই আমি বুঝে যেতাম,
তুমি এর পরে কি বলবে।
কাউকে সে কথা বলিনি কখনো,
তোমাকেও না,
এমনকি বুঝতেও দিইনি কখনো।
অর্কদা সাধারণ -অতি সাধারণ মেয়েদের
ভালোবাসা যে গোপন রাখতে হয়।
সেটা তুমি বুঝবে না।।


সেদিন অনেক গুলো দিন পার হয়ে গেছে,
তোমার সাথে মাঝে মাঝে হোয়াটসঅ্যাপে কথা হয়,
তেমন একটা না।
অল্প স্বল্প।
এই কেমন আছো,
কি করছো টাইপের।
তখন তুমি শিলিগুড়িতে থাকো,
আমাদের পড়াও না।
চাকরি পেয়েছিলে,
ওখানে পোস্টিং।
জানো অর্ক দা,
সেদিনও অনেক কস্ট পেয়েছিলাম।
অনেক কস্ট।
বাড়িতে ঘরের দরজা বন্ধ করে,
দুদিন লুকিয়ে কেঁ
দেছিলাম।
মা অনেক জিজ্ঞেস করেছিলো,
আমি পেটে ব্যাথার দোহাই দিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিলাম।
একটা সময় আমার হুসও ফিরে ছিলো,
নীজেকে বোঝাতে চাইছিলাম,
এতে তো তোমারই ভালো হয়েছে,
আমি কি বোকা, কষ্ট পাচ্ছি কেন!
আমার তো অনেক আনন্দ পাওয়ার কথা।
তারপর থেকে আর কাঁদিনি।
তোমার কথা একবার শুনবো বলে,
মোবাইলের কিপ্যাডে অনেক বার হাত দিয়েছি,
কিন্তু নম্বর চাপার পরে,
ডায়েল করার সাহস হয়নি।
তোমাকে বড্ড ভয় লাগে,
কি ভাবতে না কি ভাববে!!
তাছাড়া তখন তোমার প্রিয়াদি  আছে,
খামোখা, আমি....
জানো একবার তো একটা আননোন নম্বর থেকে,
তোমাকে কল করেছিলাম।
তোমার ভয়েজ শোনার জন্য।
তুমি হ্যাঁলো হ্যালো বলেছিলে,
আমি কেটে দিয়েছিলাম।
রেকর্ড করে রেখেছিলাম,
যখন খুব ইচ্ছে করতো,
তখন রেকর্ডটা শুনতাম।
কি যে ভালো লাগতো,
তোমায় কি করে বোঝাই অর্কদা।


সেদিন তুমি হোয়াটসঅ্যাপে বলছিলে,
তুমি সব যেনে গেছো।
আমি তোমাকে ভালোবাসি সেই কথা।
আমাকে জিজ্ঞেস করলে,
"সত্যি কিনা"!
আমি চেপে রাখতে পারিনি আর,
চোখ বন্ধ করেই টাইপ করে ফেললাম "হ্যাঁ"।
ভয়ে ভয়ে চোখ খুলে দেখি,
তোমার পাল্টা ম্যাসেজ,
"বিয়ে করবে আমাকে?"
আমি অনেক অবাক হয়েছিলাম,
এগুলো কি স্বপ্ন না সত্যি!
নীজেকে একটা চিমটি কেটে দেখলাম,
সব সত্যি।
নীজের আবেগগুলো আর বেঁধে রাখতে পারিনি সেদিন,
তোমার সবকটা প্রশ্নের সঠিক জবাব দিয়েছিলাম,
নীজের জন্য কিছুই জিজ্ঞেস করতে পারি নি।
তুমি জিজ্ঞেস করেছিলে,
"আমাকে বিয়ে করবে?"
আমি কাপা কাপা হাতে লিখেছিলাম "হ্যাঁ"।
আরো জিজ্ঞেস করেছিলে,
"তোমার বাড়ি থেকে যদি না মেনে নেয়?"
আমি দারুণ আত্মবিশ্বাসের সাথে বলেছিলাম, 
"পালিয়ে যাবো তোমার সাথে"।


পরের দিন আমি অনেক খুশী,
আনন্দে অনেক নাচ করেছিলাম।
রাতে কিছুতেই ঘুম আসছিলো না,
তোমার কথা খুব মনে পড়ছিলো,
বিশেষ করে সেই কথা,
প্রিয়াদি ছেড়ে যাওয়ার দুখের কথা গুলো।
আমি তোমায় অনেক ভালোবাসি জেনে,
তুমি আমাকে জীবন সংগিনী করতে চেয়েছো।
বিশ্বাস করো অর্ক দা,
সেদিন সারারাত দুচোখের পাতা এক করতে পারিনি।
সাত পাঁচ ভেবেছি,
অনেক করে ভেবে দেখলাম।
বড্ড ভূল হয়ে গেছে আমার,
তুমি তো আমায় দয়া করছো।
আমার দয়া চাইনা।।
তুমি প্রিয়া দিকে বড্ড ভালোবাসো।
ওকে ভূলে যাওয়ার জন্য আমাকে কাছে নিতে চাইছো,
কিন্তু আমি এমনটা চাইনা অর্ক দা।


পরের দিন তুমি অনেক বার ফোন করেছো,
হোয়াটসঅ্যাপে অনেক কথা লিখেছো।
বিশ্বাস করো,
আমি পারি নি।
নীজেকে বড়ো সার্থপর মনেহচ্ছিল।
বড়ো বেশি লোভী মনে হচ্ছিল।
জানি সেদিন তোমার অনেক কস্ট হয়েছিল,
তোমার মনে হয়েছিল,
আমি তোমার সাথে নাটক করেছি,
ঠকিয়েছি।
বিশ্বাস করো,
আমার চোখের জল সাক্ষী,
আমি তোমায় কস্ট দিতে চাইনি।
শুধু ভালোবাসার ভাগ নিতে চাইনি।
অর্কদা দূর থেকে তোমায় দেখবো,
কোনো এক গৃহবধু হয়ে,
আবেগগুলিকে,
আচলে লুকিয়ে রাখবো।
পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও।
অনেক ভালোথেকো অর্কদা,
ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি,
অনেক সুখী হও।