ঠিক তখন রাত চার প্রহর , ঘড়ির কাঁটায় বারোটা । দূরের কুকুর গুলো প্রহরের ডাক দিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে পড়েছে । নগরায়নের যুগে পোড় খাওয়া সৌর বাতি গুলো গ্রামের কোনায় কোনায় জ্বলছে নিভছে  যেন বার্ধক্য দাদুর দিনাতিপাতের মতো। সদ্য বিবাহিত পাড়ার দাদার ঘরে যেখানে কোন দিন আলো জ্বলতে দেখিনি সেখানের ভেন্টিলেটর দিয়ে বাতির আলো লাল চোখে পাহারা দিচ্ছে নবদম্পতির আসন্ন ভবিষ্যত ।  কৃষ্ণচূড়ার ডালে কুসুম এসেছে , পুরোনো ফল তখনো ঝরে যায়নি । আর তার পাশেই লক্ষ্মীছাড়া কালপেঁচা টা নীল চোখে কর্কশ চিৎকার দিয়ে পাড়াটা কে অশান্ত করে দিল কয়েক মুহূর্ত ।


          ছোট বেলায় শুনেছি একজন প্রহরী তামাং রাত্রির এই আঁধারে " জাগতে রহো , জাগতে রহো " বলে সারা গ্রাম হাঁক দিয়ে যেতো । হাতে একটা নূপুর লাগানো লাঠি , কোমরে পাহাড়ি ছোরা আর একটা লন্ঠন । সময়ের গহ্বরে সেসব এখন সোনালী অতীত । সেই তামাং দাদু উত্তরে ফিরে গেছে সেই কবে , আজ হয়তো সে এই পৃথিবীরো অতীত ।


       সময় পেরিয়ে যাচ্ছে , আমি আজ ঘুমাচ্ছি না । যেরকম স্টিফেন হকিং তাঁর কোয়ান্টাম থিয়োরির জটিল অঙ্ক নিয়ে বসে আছেন , মিলছে না । মিলছে না কৃষ্ণগহ্বরের তত্ত্ব । আইনস্টাইন তাঁর শনপাপড়ির মতো চুল গুলো ছিঁড়ছেন ক্রমাগত e = mc² সূত্র লিখতে তাঁর তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে  । আমিই হকিং আবার আইনস্টাইনের মতো সমাধান খুঁজে চলেছি আমার অনিদ্রার রাতে কৃষ্ণগহ্বরের চেয়েও জটিল তুমিকে বোঝার জন্য । তুমি যদি "e" হও তাহলে mc² আমার সমাধান খোঁজার এই চেষ্টা নতুন নয় । যুগে যুগে কতো আমি এই mc² সমাধানের চেষ্টা করছে , আমিও তাদের প্রতিনিধি ।


       আরো একটা প্রহর কেটে যাচ্ছে । আমার ঘুম নেই । লাল আলোটাও নিভে গেছে দেখলাম । আরো কয়েকটা সূর্যোদয়ের পর কৃষ্ণগহ্বরের ভিতর দিয়ে আমরা আসন্ন ভবিষ্যত দেখতে পাবো । পাবো না শুধু ( তুমি = mc² ) এর সমাধান ।


*ছন্নছাড়া*