মক্কাবিজয়ী বীর মুসলিম সেনাপতি মুহাম্মদ ,
মানবতার কান্ডারী তিনিই শেষনবী আহম্মদ ;
তার ডাকে সাড়া দিলো দলে দলে আরববাসী ,
ইসলামের দীক্ষা নিয়ে মুসলিম হল মরুবাসী ।
বিশ্বনবী বুঝলেন  জীবনের কর্তব্য শেষ হয়েছে ,
হয়ত তাঁর জীবন প্রদীপ ফুরিয়ে আসছে ;
তাই তিনি শেষ হজ্জ পালনের ইচ্ছা করেন ,
দশম হিজরীর পনেরই জ্বিলকদ রওয়ানা হলেন ।
এক লক্ষের অধিক সাহাবী তাঁর সঙ্গ দিলেন ,
মক্কার পথে নবী সহধর্মিণীদের সঙ্গে নিলেন ;
কুরবানির জন্য  ১০০ উট ছিল তাঁর সাথে
বিদায় হজ্জ পালনে চললেন কাবার পথে ।
‘যুল হুলাইফা’য় ইহরাম পরিধান করে নবী
মক্কায় এসে হজ্জের নিয়ম পালন সবই করেন ,
যিলহজ্জের অষ্টম দিনে আরাফার ময়দানে পৌঁছেন।
নবম দিনে জাবালে রহমত পর্বত শিখরে উঠেন ।
সেখানে দাড়িয়ে দিলেন এক অবিস্মরণীয় ভাষণ ,
যা শুনে কেঁপে ওঠে উপস্থিত মুসলিমের হৃদয় আসন ।
দৃপ্ত ও দৃঢ় কন্ঠে নবী মুহাম্মদ ভাষণ দিলেন ,
রাবী‘আহ বিন উমাইয়া বিন খালাফ’
যা উচ্চস্বরে প্রচার করেন ।


নবীজি বললেন  “হে মানব মন্ডলী!  
শ্রবণ কর আমার কথা মন দিয়ে ,
আগামী বছর তোমাদের সাথে দেখা
হবে কিনা সন্দেহ হয় তা নিয়ে ।
সব জাহেলিয়াতকে আমার দুপায়ের নিচে পিষ্ঠ করে যাচ্ছি ,
নিরাপরাধ মানুষের রক্তপাত চিরতরে হারাম ঘোষনা করছি
জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র থেকে ’সুদ’ কে চির দিনের জন্য
হারাম ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো ,
হজ্জের দিন ও মক্কা নগরী যেমন তোমাদর কাছে পবিত্র
তেমনি পবিত্র আমানত , যার হেফাজত করে চলো ;
তোমাদের সৃষ্টিকর্তা একজন পিতাও একজন আদম ,
আরব অনারব সাদা কলোর  তফাৎ কেন হবে !
একের উপর অন্যের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই
তাকওয়াই’ শুধু পার্থক্য নির্ণয় করবে ।
নারীদের ওপর যেমন পুরুষদের অধিকার রয়েছে
তেমনি পুরুষদের উপর রয়েছে নারীদের অধিকার।
যদি কোন নারী সীমা লঙ্ঘন করে তাদের শাস্তি দাও
তাদের উপর জুলুম করোনা , পথ দেখাও ফিরে আসার ।
মুমিনরা পরষ্পর ভাই অখণ্ড মুসলিম ভ্রাতৃসমাজ ভুলে যেওনা
ভাইয়ের ধন-সম্পদ তার অনুমতি ব্যতিরেকে দখল করো না।
তোমরা একে অপরের উপর জুলুম করোনা ,
আর কখনও তোমরা শয়তানের অনুসারী হইয়ো না ।
আল্লাহর বন্দেগি করবে,দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত প্রতিষ্ঠা করবে,
রমজান মাসের সিয়াম পালন করবে,যাকাত আদায় করবে ,
আর তোমাদের নেতার আদেশ মেনে চলবে,
তবেই তোমরা জান্নাত লাভ করবে।
সাবধান! তোমাদের গোলাম ও অধীনস্থদের বিষয়ে
আল্লাহ তা’আলাকে ভয় কর মানবিক হয়ে ।
তোমরা যা খাবে তাদেরকে তা খেতে দেবে .
তোমরা যা পরবে তাদেরকেও সেভাবে পরতে দেবে।
হে লোক সকল! আমি কি তোমাদের নিকট
আল্লাহ তা’আলার পয়গাম পৌছে দিয়েছি?
“আমার বিষয়ে তোমাদের জিঞ্জাসা করা হবে,
সে দিন তোমরা কি সাক্ষ্য দিবে জানতে চেয়েছি ,
উপস্থিত সকলে সম্মতি জ্ঞাপন করে বলে ওঠে
“আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আপনি আমাদের নিকটে
রিসালাতের পয়গাম পৌঁছে দিয়েছেন,
উম্মতকে সকল বিষয়ে উপদেশ দিয়েছেন,
সমস্ত গোমরাহির আবরণ ছিন্ন করে দিয়েছেন
ওহি পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব পরিপূর্ণ ভাবে পালন করেছেন ।”
অত:পর রাসূলুল্লাহ নিজ শাহাদাত অঙ্গুলি আকাশপানে তুলেন
তিনবার বললেন, “হে আল্লাহ তা’আলা
আপনি সাক্ষী থাকুন, আপনি স্বাক্ষী থাকুন, আপনি সাক্ষী থাকুন”।
হে মানুষেরা! আল্লাহ তায়ালা তোমাদের সম্পদের মিরাস
ঠিক করে দিয়েছেন , তার থেকে কম বেশি করবেনা ,
সাবধান! সম্পদের তিন ভাগের এক অংশের চেয়ে
অতিরিক্ত কোন অংশ অসিয়ত করবে না ।
ব্যভিচারের শাস্তি হচ্ছে প্রস্তরাঘাত ,
তার কোন ফরয ও নফল ইবাদত কবুল হবে না ।
মনে রেখ! সকলকে একদিন আল্লাহ তা’আলার নিকট
হাজির হতে হবে ,
সে দিন প্রতিটি কর্মের হিসাব গ্রহণ করা হবে ।
তোমরা আমার পরে গোমরাহিতে লিপ্ত হবে না,
পরস্পর হানাহানিতে মেতে উঠবনা ।
আমি সর্বশেষ নবী, আমার পরে আর কোন নবী আসবে না ,
আমার সাথে ওহির পরিসমাপ্তি হবে তা আর আসবে না ।
হে মানুষেরা! আমি নিঃসন্দেহে একজন মানুষ ,
আল্লাহর ডাকে আমাকেও সাড়া দিতে হবে।
আমি তোমাদের জন্য দুটি বস্তু রেখে যাচ্ছি
যা তোমরা নিজেদে কাছে ধারন করে রাখবে ।
যতদিন তোমরা এই দুটি বস্তু আঁকড়ে থাকবে,
ততদিন তোমরা নিঃসন্দেহে পথভ্রষ্ট হবে না।
একটি আল্লাহর কিতাব ও অপরটি রাসূলের সুন্নাহ ,
যা কখনও পরিত্যাগ করবে না ।
হে মানব মন্ডলী! তোমরা আমির বা নেতার আনুগত্য করো
এবং তিনি হাবশি ক্রীতদাস হলেও তার কথা শ্রবণ করো ।
যে পর্যন্ত তিনি আল্লাহর কিতাব অনুসারে তোমাদের পরিচালিত করেন,
ততদিন অবশ্যই তাঁর কথা শুনবে,
তাঁর নির্দেশ মানবে ও তাঁর প্রতি আনুগত্য করবে।
আর যখন তিনি আল্লাহর কিতাবের বিপরীতে অবস্থান গ্রহণ করবে,
তখন থেকে তাঁর কথাও শুনবেনা এবং তাঁর আনুগত্যও করা যাবে না।
সাবধান! তোমরা দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করোনা ।
জেনে রেখো, বাড়াবড়ির পরিনতি ভাল নয় ,
তোমাদের পূর্ববর্তীগন এ কারনই ধ্বংস হয় ।
আবার বললেন, আমি কি তোমাদের নিকট আল্লাহর দ্বীন পৌছে দিয়েছি?
সকলে বললেন, “নিশ্চয়ই”।
হে উপস্থিতগণ! অনুপস্থিতদের নিকট আমার এ পয়গাম পৌছে দেবে ,
হয়তো তারা কেউ এ নসিহতে তোমাদের চেয়ে বেশি আমল করবে।
“তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক”  বিদায়।


               ******************


ইসলামর ইতিহাসে ও হযরত মোহাম্মদ (সঃ) এর জীবনে বিদায় হজ্জের ভাষণ বা বিদায়ী খুৎবা অত‍্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে কারন এই ভাষণ হচ্ছে মুসলমানদের পার্থিব জীবন পরিচালনার দিক নির্দেশনা।
রাবী‘আহ বিন উমাইয়া বিন খালাফ’ বিশ্বনবীর একজন ঘনষ্ঠ সাহাবী
মুসলমান ভাইয়েরা বিশ্বনবীর সকল নাম ও পদবী বলার সময় মনে মনে দরূদ পাঠ করে নিবেন