(কবিতাটি পুঁথি পাঠের মতো পড়তে হবে। আবার কেউ চাইলে খেমটা তালেও পড়তে পারে)
পালকি চড়ে বধু বেশে
ঝুম ঝুম ঝুম মলে,
হাসতে হাসতে দুলতে দুলতে
টুল পড়ে তার গালে।
আরে, যাচ্ছে চলে, যৌতুক লয়ে
খচ্চর পোলার বাপ,
খাবলা দিছে বুকের মধ্যে
লাইগ্যা আছে ছাপ।
বল, হুহুন না, হুহুন না।
মেয়ের বাপের জমি-জিরাত
বন্ধক দিলো হাটে,
মনের দুঃখে বর্গা চাষীর
দিবস-রাত্রী কাটে।
যাচ্ছে মেয়ে শশুরবাড়ী
আদর সোহাগ মাখা,
ভালো থেকো সুখে থেকো
দিও মাঝে দেখা।
পাশের বাড়ীর দারগা বুড়ি
ফিরে ফিরে চায়,
বিদায়ক্ষণে চোখটা মুছে
একলা কেঁদে যায়।
বল, কাদিস না, ওরে কাদিস না
নব বধুর নতুন বাড়ি
নব নব সাজ,
স্বামী সোহাগ ভালোবাসা
লাগছে ভীষণ লাজ।
দেবর-ননদ পাড়া-পড়শী
দলে দলে আসে,
দুস্টমি আর মিস্টি কথায়
ক্ষণে ক্ষণে হাসে।
ছাতা হাতে দাদা শশুর
মুখ ভরা তার পান,
বায়না সবার এবার দাদুর
গাইতে হবে গান।
বল, গান চলুক না, গান চলুক না
বায়না শুনে যেইনা দাদু
উচু স্বরে ধরে,
দাদি বলে, কাকের কন্ঠ
যাই যে লাজে মরে!
দাদু বলে, গাওনা পারলে
কোকিল কন্ঠের গান!
তোমার জন্যে নাচতে পারি
করতে পারি ফান!
বরের বাড়ি হাজার মানুষ
কত রান্না-বান্না,
কনের বাড়ির চুলা বন্ধ
যাচ্ছে করে কান্না!
বল কেঁদোনা, ওরে কেঁদোনা
খাবার শেষে ফিরে বাড়ি
আশে পাশের লোক,
পারবে কনে সামাল দিতে?
দুরু দুরু বুক?
খুব সকালে উঠতে হবে
করতে হবে কাজ,
তা না হলে সবার আগে
মাথায় পড়বে বাজ!
গোয়াল ভরা গরু আছে
গোলা ভরা ধান,
এটা সেটা করতে করতে
কন্যা পেরেশান।
চুলা জ্বালো, ধুলো ঝাড়
গরম গরম চা,
ক্ষণে ক্ষণে ডাকা-ডাকি
'এই তো আসছি মা।'
বলে, এটা করো না, ওটা করো না।
দিনে দিনে দিন চলে যায়
ঘুরে ফিরে বছর,
ভগ্ন দেহ, সবাই বলে
ধরছে জ্বীণের আছর।
চোখের কোনে দুঃখের আভা
নিবু নিবু জ্বলে,
ঔষধ বিহীন তাহার জীবন
মনের জোড়ে চলে!
পরান পাখী আনচান করে
আপন কেহ নাই,
হঠাত একদিন চাঁদের আলো
চুপি নিভে যায়!
কাঁদে আকাশ, কাঁদে বাতাস
বাঁধ ভেঙ্গে যায় জলে,
এটাই বাস্তব, এটাই ঘটে
এই সমাজের তলে।
বল আর হবে না, আর হবে।