(তালে তালে পড়তে হবে। এটাও খেমটা তালে পড়া উপযোগী কবিতা)
বনগাঁ থেকে রেলগাড়ীতে
যাচ্ছি কলিকাতা,
গাড়ীর ভীতর হাজার মানুষ
হাজার রকম কথা।
ঝিকি ঝিকি ট্রেন ছুটেছে
হেলে দুলে পড়ি,
ঠেলাঠেলি হুড়োহুড়ি
চুরি হলো ঘড়ি!
আমার পাশে মোটা দাদি
ঢূলো ঢূলো ভাব,
অকারণে ক্ষণে ক্ষণে
দিচ্ছে পায়ে চাপ।
বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না
কি করিব ভাই,
পাশে ছিলো চিকনা ভাবি
তোলছে বারে হাই।
হারমনিয়ামের করুণ সুরে
ভগবানের নামে,
ভিক্ষে করছে বাপে-ছেলে
ট্রেনের রুমে রুমে।
নিবেন দাদা চানাচুর-মুড়ি
সাথে চিনে বাদাম,
খেতে চাইলে আওয়াজ দিবেন
নামটি আমার জামান।
যাচ্ছেন কোথায়? বাড়ী কোথায়?
দেখতে ফিটফাট,
থাকি ঢাকার ফার্মগেটে
যাচ্ছি রানাঘাট।
আমার বাড়ী ফরিদপুরের
ছোট্ট একটি গ্রামে,
সাতচল্লিশে চলে এলাম
মন যে আজও টানে।
বাড়ির পাশে পদ্মা নদী
বিকেল হলে খেলা,
এই নদীতে ভাসিয়ে এলাম
ভালোবাসার ভেলা।
এই যে দাদা চেপে বসেন
বৌদি আছে সাথে,
ভীড়ের মধ্যে কোন ভ্রমরা
চিমটি কাঁটে হাতে?
ভীষণ গরম, ঘামে ভিজে
প্রাণ যে চলে যায়,
কোন বা গাঁয়ের মিস্টি মেয়ে
ফিরে ফিরে চায়!
মনটা কেমন আনচান করে
নাম কি তোমার ছুড়ি?
দেখতে তোমায় ভীষণ মিস্টি
বয়েস হবে কুড়ি।
আমার কাছে অনেক আছে
নিবেন দাদা বই?
আপন মনে পড়ছে দাদু
মুগ্ধ চেয়ে রই।
দুরের মানুষ কাছের হলো
করছি আলাপন,
কে বা শত্রু, কে বা মিত্র
সবাই আপনজন।
মনে মনে ভাবছি আমি
দুর সীমানায় চোখ,
একটি শিশু করুণ কন্ঠে
আতকে উঠে বুক!
নয়ন ভরা জলে তাহার
মায়ায় ভরা মুখ,
কোন পাপিষ্ঠ কেড়ে নিল
মায়া ভরা সুখ?
পাশে ছিল দিদা-দাদু
ক্ষণে বাদাম খায়,
তাদের কাছে জীবন মানে
বেঁচে থাকাই দায়।
ট্রেন ছুটেছে,দ্রুতালয়ে
ছুটছে সময় যেমন,
একটু বাদেই নেমে যাব
আপন আপন ভুবন।
ক্ষণিক দেখা মিস্টি কথা
লাগলো ভীষণ ভালো,
ভালো থেকো, সুখে থেকো
জীবনটা হোক আলো।
করুণ সুরে ট্রেনটি থামে
সবাই আপন পানে,
আর কি দেখা হবে বন্ধু
প্রশ্ন জাগে মনে?