আমি হাঁটছি-
জোরে হাঁটছি,
চারপাশে মানুষের ভিড়-
দু হাতে সরিয়ে দিয়ে, হাঁটছি।
আকাশে নবীন সূর্য লাল রঙে-
দিগন্তে চোখ মেলে ওঠে,
প্রভাতের জানালাটা খুলে
সোনালী রঙেতে রাঙা হাসে।
বাতাস শিশির ভেজা চোখে
ঘুম ভেঙে আড়মোড়া ভাঙে,
কুয়াশায় আচ্ছন্ন স্টেশনে,
ভিজে ট্রেন, ধীর লয়ে আসে,
চা ওয়ালার রোজনামচা,
এ জীবন শুধু পথ চলা।


আমি হাঁটছি-
শুধু হাঁটছি,
সময় চলছে একই সাথে,
দুপুরের ঘামে ভেজা রোদে,
গাছেরা অলস চোখে চেয়ে,
শ্রান্ত তাপ প্রবাহে।
জীবিকায় পণ্য জীবন-
শোষণের যন্ত্রে পিষ্ট মন,
শ্রান্ত, ক্লান্ত, নুব্জ, শরীর,
অত্যাচারে প্রাপ্তি অনাহার,
সারি সারি চলে সাথে সাথে,
রক্ত রাঙা বিপ্লবের পথে।
এ বিপ্লব দীর্ঘস্থায়ী হোক-
আশায় বাঁচুক সব ভাষা,
এ জীবন শুধু পথ চলা।


আমি হাঁটছি-
দুপাশে জনস্রোত হাঁটছে,
আমার বুকের মাঝে উদ্বেগ,
গোধূলির ইমন কল্যাণে,
বর্ষার ভিজে রাস্তাতে,
গলিপথ মেশে রাজপথে,
আকাশেতে রামধনু আঁকা,
ময়ূরী মেলেছে তার পাখা,
অলস মেঘের আনা গোণা,
হাঁটতে হাঁটতে পথে চলে।
বৃদ্ধ সূর্য ডুবু ডুবু-
সাত সমুদ্রের সুদুরের পাড়ে,
যেতে যেতে সঙ্গোপনে বলে,
কক্ষপথে শুধু ঘুরে চলা-
এ জীবন শুধু পথ চলা।


আমি হাঁটছি-
তমসা গহন কুয়াশায়,
সহযাত্রীরা আজ আকাশের তারা-
তাদেরই আলোতে ঝাপসা রাস্তায়।
মানুষ তো বট গাছ হয়-
অসীম কল্পনায়,
বৃদ্ধ তো বট গাছ নয়,
ঝুরি তার ছিন্ন ভিন্ন,
প্রোথিত দূর দূরান্তরে,
স্থানুবৎ নিজস্ব শিকড়ে,
স্মৃতির যষ্টি নিয়ে হাতে-
একলা বৃদ্ধ হেঁটে চলে।


আমি হাঁটছি-
আমার, হাত দুটো প্রক্ষিপ্ত,
আকাশের দিকে, তারাদের দিকে,
হারিয়ে যাওয়া সহযাত্রীদের দিকে।
এখনও যে তাও অবশিষ্ট-
এ জীবনের অনেকটা পথ চলা।