নয়ন দীঘির কালো জলে
রাজহাঁস গুলো চক্কর কাটতো গ্রীবা তুলে,
রিমঝিম বর্ষায় গভীর রাতে-
ব‍্যাঙের ডাকও কখন যেন থেমে যেত ক্লান্তিতে।
গভীর জলের মাছেরা ঘাই মারতো বৃষ্টিতে,
শীতের দুপুরে একটু দূরে দূরে-
অস্থায়ী মাচা বেঁধে, অনেকেই বসে যেত মাছ ধরতে,
গ্রামের জীবনের সাথে, দীঘিটা ছিল নিবিড় আলিঙ্গনে।


সে অনেকদিন আগের কথা, প্রায় বছর পঞ্চাশেক হবে
সবে রাস্তায় ল‍্যম্পপোষ্ট পুঁতে, বিজলি বাতি লাগিয়েছে,
তখন স্কুলে যেতে হত দূরে, সাইকেল ভাড়া নিয়ে।  
ঝিঁঝিঁর ডাক শুনে, আর জোনাকি পোকার আলোতে,
রাতের জুঁই, চামেলি, বেলি ফুলের গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে,
কখন যেন অজান্তেই চলে যেতাম, রঙীন স্বপ্নের দেশে।
ভোরবেলা ঘুম ভাঙাতো একটা কাঠবিড়ালী এসে,
তাকে বিস্কুট খাইয়ে চলে যেতাম, রামরতনের গোয়ালে।


দিনে দিনে সেই ছোট্ট গ্রামে, ষ্টেশন তৈরি হল,
গ্রাম চিরে যাওয়া রাস্তাটা, হাইওয়ের সাথে যুক্ত হল,
গ্রাম শহর জুড়ে গিয়ে, উন্নতির ঢেউ আছড়ে পড়ল,
নয়ন দিঘিতে তৈরী হলো সুইমিং পুল,
স্কুল, কলেজ, ব‍্যাঙ্ক, এক এক করে তৈরী হয়ে গেল।
উন্নতির আঁচে ঝলসানো, পুরোনো জীবনের অঙ্গার,
বুলডোজার চালিয়ে এক এক করে সব পরিস্কার,
অর্থের বিনিময়ে হাত বদল, সাত পুরুষের ভিটের।


রাতে জেগে থাকে, রাস্তার দুপাশের হ‍্যালোজেন বাতি,
নতুন নির্মাণে ব‍্যবহৃত, বিশালাকায় আধুনিক যন্ত্রপাতি,
উন্নয়নের সুনামীর ধাক্কার ফসল, ভাঙা বাড়ির সামগ্রী,
নষ্টালজিক কিছু উচ্চ শর্করা ও রক্তচাপ বিশিষ্ট রুগী।
কুঁড়েঘরের জীবন, সহাস‍্যে বদল দুই কামরার ফ্লাটে,
উন্নযনকে স্বাগত জানিয়ে, বার্ধক‍্যের কষ্ট উপেক্ষা করে,
প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নিই, লিফ্টে বহু তলের ছাদে উঠে,
নতুন নির্মাণের উৎকর্ষ দ‍েখি, হাত বদলি ভিটেটিতে।