বিক্রি হয়ে যাবে কাল, আমাদের গ্রামের বাড়ি,
সবাই যাবে গ্রামে, যাদের আছে অংশীদারী-
ড্রাইভার কে বলা আছে, এসে যাবে সকালেই,
আজ তাই শুয়েই পড়লাম তাড়াতাড়ি।


একটু তন্দ্রা এসেছিল, কে যেন ধাক্কা দিল-
তন্দ্রাচ্ছন্ন আমি বললাম, কে?
মেয়েলী গলায় বলল: আমি মায়া।
প্রশ্ন করলাম কে মায়া?
উত্তর এল: আমি তোমার শৈশব, তোমার কৈশোর,
বদমাইশি, খেলা, দুঃখ, কষ্ট, আনন্দ,
থাকতাম সেই গ্রামের বাড়িটার-
প্রতিটি কোণে কোণে,
আমরা সকলেই এসেছি দল বেঁধে।


তোমরা সকলে এসেছ মানে?
বলল: এইতো এ স্নেহ,
তোমার গুরুজনদের সাথে থাকত,
যাদের ছায়ায় তোমার বড় হয়ে ওঠা-
যারা সর্বদাই তোমার কল‍্যাণ চাইত।


আর এ হলো মমতা,
তোমার মা, এর মধ‍্যে থাকত,
তোমাকে দুঃখ, কষ্ট থেকে আড়াল করে-
আবদার সামলে, গল্প বলে ঘুম পাড়িয়ে দিত।


আজ আমরা সবাই এসেছি,
তোমার সাথে শেষ দেখা করার জন‍‍্য,
এতদিন অপেক্ষায় বসে ছিলাম গ্রামে-
তোমার ফেরার পথ চেয়ে।
কাল তোমার সাথেই গ্রামে ফিরব সকলে,
বাড়ি টা বিক্রী হয়ে গেলে-
তোমার বাড়ির জন‍্য যে দুঃখ টা হচ্ছে,
সব আমাদের দিয়ে দেবে-
আমরা সবাই মিলিয়ে যাব শূণ‍্যে।


শুধু থেকে যাবে আজীবন, তোমার অন্তরে-
টুকরো টুকরো ফেলে আসা স্মৃতির বাগানে,
কোন এক অখণ্ড অবকাশে, উদাসীন মনে,
আবার খুঁজে পাবে নিজেকে গ্রামের রাস্তায়
অশ্রু ভেজা চোখে, মুখে হাসি নিয়ে-
পুরোনো বন্ধুদের সাথে নিবিড় আড্ডায়।


ও, সেই বসন্তের কোকিলটাও এসেছে সাথে,
এরই কুহু কুহু ডাকে, ভরা যৌবনে-
প্রেম এসেছিল তোমার মনে, মৃনালিণীকে দেখে,
বাল‍্য প্রেম উপেক্ষা করে চলে এসেছিলে-
চাকরী করতে শহরে, মনে পড়ে?


আমি চিৎকার করে বলতে চাইলাম-
মিথ‍্যে কথা, আমি পরে খোঁজ নিয়েছিলাম,
মৃনালিনীর পাশের গ্রামে বিয়ে হয়েছিল-
স্বামী, পুত্র দের নিয়ে সুখে সংসার করছিল।


আবার একটা ধাক্কা,
চোখ মেলে দেখি আমার স্ত্রী মুখের দিকে তাকিয়ে-
বলছে: কিছু বলছিলে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে ?
বললাম: আমার কিছু মনে পড়ছে না-
তুমি কি কিছু শুনেছিলে?