সন্তান হারানোর জ্বালা, তোমরা কি করে বুঝবে?
তোমাদের কি পায়ের তলার মাটি সরে গেছে?
যে চোখ দুটো দিয়ে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখ,
সে দুটো তো এখনও অন্ধ হয়ে যায় নি,
তিল তিল করে যেগুলো সঞ্চয় করেছ,
সেগুলো তো কর্পূরের মতো এখনও উবে যায় নি,
তোমাদের ঘরের ছাদ, দেওয়াল, এগুলো
এখনও তো তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েনি।
আজ তো তোমরা সবাই আমাকে করুণা করো,
আমাকে নানান কাজের মধ্যে ব্যস্ত রাখো,
আমাকে দেখে যে কষ্ট হয়, সেটাও তো চেপে রাখো,
আমার সামনে না হলেও, আড়ালে তো কাঁদো।
সত্যি! তোমরাও তো আমার সন্তানের কত আপনজন,
আমার মতো তোমাদেরও তো কাঁদে প্রাণ মন,
যে চলে গেছে, সে তো ঈশ্বরের দেহেই হয়েছে বিলীন,
পাথরের ঈশ্বর কি এসব কথা বোঝে কোনোদিন?
শুধু শুধু তোমরা আমার জন্য ভাবো,
আমাকে সান্ত্বনা দিয়ে, নিজেদেরই ছোটো করো,
আমি তো গাছ নয়, যে নিজের ফল বিলিয়ে দেবো,
আমিও তো ভেবেছিলাম, তোমাদের মতো
সারা জীবন সন্তানকে আঁকড়ে ধরেই বেঁচে থাকবো।
আমাকে তোমরা আর সান্ত্বনা দিও না
মনে রেখো, মৃত্যু যন্ত্রণা থেকেও, সন্তানের চির বিরহ যে
কত কঠিন, তা একমাত্র ভুক্তভোগীই বুঝতে পারে।
এই পর্যন্ত বলিয়া এক সন্তান হারা মাতা,
দুই আঁখি হইতে বহমান অশ্রু নদীতে
সর্বসমক্ষে সিক্ত হইতে লাগিল।
তাঁর অশ্রু ধারার বণ্যায়, উপস্থিত প্রত্যেক মনুষ্যের,
আঁখি পল্লব সিক্ত হইয়া গেল।
স্বয়ং ঈশ্বরও এই দৃশ্যে ব্যথিত হইলেন,
এক অতি বৃদ্ধ মনুষ্যের বেশ ধরিয়া
সেই মাতার সম্মুখে আবির্ভূত হইয়া বলিলেন:
থামো ওহে ক্রন্দনরতা, সন্তান হারা মাতা!
জন্মিলে মরিতে হবে, এটিই সত্য কথা।
জীবনে বিপর্যয় আসে, আবার চলেও যায়,
মনুষ্য জীবন ক্রন্দনের জন্য কখনোই নয়।
সেই যথার্থ মানুষ, যে জীবনে বহু বিপর্যয় দেখেছে,
আবার বিপর্যয়ের সাথে নিজেকে মানিয়েও নিয়েছে।
পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ মাতৃহারা সন্তান আছে,
তুমি যদি সতত ব্যস্ত থাক নিজেকে নিয়ে,
তবে কখনও পারবে না, তাদের দুঃখ নিরাময় করতে।
অতএব আজ হতে তোমার উদ্দেশ্য হোক, হে জননী,
তুমি হাত ধর সমস্ত মাতৃহারাদের, হও বিশ্ব জননী।
এই পর্যন্ত বলিয়া ঈশ্বর মর্ত হইতে বিলীন হইলেন।
☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆
গত বছর ১৬ই এপ্রিল ২০২১, আমার শালীর একমাএ পুত্র সন্তানের ৩৫ বছর বয়সে অকাল প্রয়াণে, শালী এখনও সেই শোকের রেশ থেকে বেরোতে পারে নি। আমদের সমবেত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এখনও একই ভাবে শোকে মুহ্যমান। সম্ভবতঃ এই স্মৃতি আঁকড়ে বেঁচে থাকাটাই, ওর ভবিতব্য। অবশ্য আমি এবং আমার স্ত্রী, সকলেই এই শোকের ভাগীদার। আমি এই লেখার মাধ্যমে, একটা ছোট্ট বাণী, আমার শালীকে দিতে চেয়েছি, যদি একটু মানসিক জোর পায়।
অত্যান্ত মর্মস্পর্শী ঘটনার কাব্য রূপ।
মনের জোর অতিঅল্প মানুষের থাকে বিশেষ করে মায়েদের। মায়াকে সরানো খুবই কঠিন।
আন্তরিক শুভেচ্ছা নিরন্তর, ভালো থাকবেন কবি।
মর্মস্পর্শী উপস্থাপনা...
স্বাভাবিক চোখের জল বাঁধ মানে না
প্রিয়জন কে যে হারায়
সেই বোঝে
হারানোর অসহনীয় বেদনা...
আত্মার শান্তিকামনা করি আর শ্যালিকা মানসিক অবসাদ কাটিয়ে উঠুন
এই আশা করি...
কাব্য যেন সন্তাপের নিরাময়ের শাব্দিক বাণী...
প্রিয়ংবদা***
কষ্টের অসাধারন ব্যঞ্জনা। শুভকামনা কবি।
আপনার এই বাস্তব সম্মত লেখায় মন্তব্য করার মতো দুরসাহস আমি করতে পারি না, তবুও বলবো মা যখন তার সন্তান হারায় সে বেথা শুধু সেই মা উপলদ্ধি করতে পারে যে সন্তান হারিয়েছে, আপনার জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা রইলো কবি, ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন নিরাপদে থাকুন।
সন্তানহারার আর্তনাদ কখনোই মুছবে না। তবে
হয়তো কালক্রমে প্রলেপ পড়তে পারে, তার জন্যেও দরকার ব্যস্ত জীবন অতিবাহিত করা।
হার্দিক শুভেচ্ছা রইল। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন সবসময়।
সন্তান হারা মায়ের আর্তনাদ খুব গভীর।জীবনবোধের কঠিন বিষয়ে দারুণ লিখেছেন কবি। শুভকামনা নিরন্তর।
অনিত্য জীবনে সুখ- দুঃখ- শোক চিরাচরিত নিয়মে সবাইকে ভোগ করতে হয়! এটা প্রকৃতির নিয়ম! লংঘন করার সাধ্য কারো নেই! যে যত তাড়াতাড়ি তার রেশ কাটতে পারবে তার জন্য ততই মঙ্গল! আসলে সন্তান হারানোর জ্বালা ভুলে যাওয়া মায়ের জন্য খুবই কষ্টসাধ্য। আশা করি আপনার এই দিক নির্দেশনা মূলক কবিতা সন্তানহারা মায়ের বুকে একটি হলেও সান্ত্বনা দেবে! আপনার সন্তানহারা শালী এবং আপনার জন্য অনন্ত শুভকামনা জানাই।
বিষয়টি জানতে পেরে খুবই দুঃখ পেলাম প্রিয় কবি। শুভকামনা রইল।
সন্তানের অকাল মৃত্যু যে কত কষ্টের সে একমাত্র ভুক্তভোগী ছাড়া কে বুঝতে পারে! দারুণ আবেগঘন জীবনমুখী বিরহী অনুভবের কবিতা,ভাল লাগলো ; শুভকামনা রইল।
বেশ সুন্দর !
এ অপূরণীয় ক্ষতি , যার যায়- সেই একমাত্র বোঝে , মানুষ বিবেকবান , সবে এ ক্ষতি সহ্য করতে পারে না ! মানুষিক সন্তুলন বজায় রাখতে পারে না ।
ক্ষোভ ভরা মন, আবেগ ভরা বাণী ।
হার্দিক শুভেচ্ছা প্রবুদ্ধ প্রিয়কবিকে , ভাল থাকুন সদা ।
কষ্টের পৃথিবীতে মায়ের সামনে থেকে সন্তানের চলে যাওয়া অসহনীয়। বিধির বিধান নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
বিধাতা এমন কষ্ট সহ্য করার শক্তি দিন সকল মা'কে।
সুন্দর শব্দচয়নে অনন্য কষ্টের কবিতা।
১৬ এপ্রিল অত্যাসন্ন। স্রষ্টার হিসাবে পৃথিবীতে নোনা পানি মনে হয় কমে গিয়েছিল। তাই মৃত্যুদূতকে আরো তৎপর করলেন। ফলে গত দুইবছর এক নোনা পানির মহাসাগর পৃথিবীব্যাপী তৈরী হয়ে গেছে। আমরা যারা বেঁচে আছি সবাই যেন একবার ঐ মহাসাগর পাড়ে যাই, কষ্ট কি বুঝতে।
কষ্টের নান্দনিক প্রকাশ। শুভকামনা রইল, সম্মানিত কবি।
বেদনাসিক্ত। কমেন্ট করার ভাষা আমার জানা নেই! যার যায় সেই বুঝে কি গেলো! আর মায়ের কাছে সন্তান তো হীরের টুকরো! মায়ের মন তো সন্তানের বিয়োগ ব্যাথা কখনো ভুলতে পারবেনা। শান্তনার ভাষা নেই। প্রভু যেন ধৈর্য্য ধরার তৌফিক দান করেন।
ভালো থাকুন প্রার্থনা প্রিয় কবি।
শ্রদ্ধা ।। অনবদ্য অনুভূতির বেশ অসাধারণ একটি জীবনবোধের ও বিরহের কবিতা ।। অনেক অনেক প্রীতি ও শুভেচ্ছা ।। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন ।। শুভ কামনা অবিরাম ।। শুভ রাত্রি