অনুতাপ
জন্মমাত্র শূন্যে দুহাত তুলে
নিজ আগমন বার্তা ঘোষণা কালে
প্রসবযাতনার মাঝে হাসিমুখে চোখের জলে স্নেহময়ী তোমায় প্রথম দেখি - মা।
সন্তানের মুখে তুলে দিয়েছিলে
আপন শরীরের অমৃতধারা।
করেছিলে ধন্য তোমার আপনার অংশকে।
সংসারের চাকার ঘূর্ণিতে,
নবজাতকেরে পীঠে বেঁধে
পাথর ভাঙ্গতে হয়নি কোন দ্বিধা।
নিজে অভুক্ত থেকেও সন্তানেরে দিয়েছো বেঁচে থাকার অন্য ।
অন্ধকার ঘরে কুপির আলোতে সন্তানেরে দিয়েছো শিক্ষার ব্রত।
করেছো তারে রক্ষা সকল সামাজিক শ্বাপদকুল থেকে।
আচ্ছা মা মনেপড়ে, যেদিন প্রথম শিক্ষক দিলেন আমার সাফল্যের সংবাদ।
বুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠেছিলে তুমি
দুঃখে নয় আনন্দে।
কুলুন্গীতে অদেখা ঈশ্বরের নামে তুলে রেখেছিলে
একটা টাকা।
জানো মা, টাকাটা এখন আছে, তোমার সন্তানের ভগবানের নামে।
সন্তানের সুখের তরে নিজেকে করেছ নিঃশেষ সারাজীবন ধরে।
দিয়েছ তাকে মানুষ হবার শিক্ষা।
যখন প্রথম উপার্জন করল তোমার সোনার চাঁদ, সকলেরে বলেছিলে তোমার সন্তানের কথা, দেখেছিলে সুখের মুখ দেখার স্বপ্ন।
জানো মা, তোমার সন্তানের আছে তাঁর অর্থ, খাওয়া পড়ায় আজ সে স্বচ্ছল।
আছে ঘরে পরিবার সন্তান।
তোমার স্থান আজ সমবয়সী মানুষের সাথে বৃদ্ধাশ্রমে।
যেন সন্তানেরে বুড়োআঙ্গুল দেখিয়ে তিরস্কার করে বলে, আমার ঠাঁই আছে। আমারে হারাতে গিয়ে খোকা তুই হেরে গেলি।
আঁধার রাতে নদীর ধারে লোকচক্ষুর অন্তরালে দাঁড়িয়ে অদেখা বিধাতার দিকে মেলেধরে হাত।
মুঠি গিয়েছে খুলে, চেঁচিয়ে উঠে বলে,
"পারিনি তোমারে দিতে স্নেহের মূল্য, তোমার সন্তানের আজ বড় অভাব।"
নদীর জোয়ারের জলে মিশে যায় চোখের জল ।
ওপার থেকে ভেসে আসে "আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে"।
শংকর রুদ্র
নেতাজী সুভাষ বিমানবন্দর
৫ - ৩ - ২০১৭