যখন মানুষ কাঁদে দু’মুঠো খাবারের জন্যে- তখন অট্ট হাসিতে হাসে দোয়েল
যখন বন্যায় ভেসে যায় ঘরবাড়ী- ঠিক তখন গাছে শিষ দেয় টিয়ে।
যখন থাকেনা শোয়ার খাটটি- থাকেনা রান্নার চুলো
ঠিক তখন এক শ্রেণীর লোক আঙ্গুল উঁচিয়ে বলে- দেখো দেখো ইস! দেখো দেখো
কিন্তু! এভাবে না দেখিয়ে পূর্ব প্রস্তুতি যদি থাকতো?
যদি আগাম ব্যবস্থা করতো? ওদের জন্যে! যারা না খেতে পেয়ে মরছে!
যারা ঘরবাড়ী হারা হয়ে আজ যাযাবর- যারা সামান্ন খাবারের জন্যে করছে কাঁন্না!
ঈদের দিনে সাজিয়ে বাসন বধু তাকায় বারে বারে- কখন উনি আসবেন দু’মুঠো নিয়ে অন্ন-
কখন রাঁধবেন? আর- সামনে সাজিয়ে দেবেন পরমো যতনে।
অপলক চোখে তাকিয়ে থাকা ছাড়া- আরকি! কিছুই করার আছে বাকী?
যখন থাকেনা মুখে একটু হাসি- ঠিক তখন অট্ট হাসি হাসে শালিক পাখি
ঠিক তখন গাছে গাছে শিষ দেয় চড়ুই-
মনে মনে শুধুই প্রশ্ন রয়ে যায়- ত্রাণ নামের খাবার আসবে কবে?
কবে পৌঁছাবে মোর দোরে?


না খেয়ে না ঘুমিয়ে কোলের ছোট্ট শিশুটিকে জড়িয়ে বুকে
কোন সে আশায় বাঁধে ঘর? নেই নেই- নেই আজ খাবার, শোবার জন্যে নেই ঘর-
খোলা আকাশের নিচে কলার ভেলায়- বাঁশ ও পাটের লাকড়ি বেঁধে কোন ভাবে বাঁচা।
শুধু মনে প্রাণে ঈশ্বরকে স্মরণ-
ঈশ্বর আল্লাহ্ গড রক্ষা করুণ মোরে।
ক্ষুধার্ত শিশুর কাঁন্নার চিৎকারে ভারি আজ আকাশ-বাতাশ সাথে মায়ের আজাহারি
কিছু করো- শুনেছো বন্যার বাপ কিছু করো- আমার বন্যা বুঝি আজ গেলো।
মাথায় হাত রেখে বন্যার পিতা ভাবে- কি করবে আজ সে, যাবে কোথায়-
অনাহারি শিশুর কাঁন্নায় ভেঙে পড়ে সে নিজেও- অশ্রু ঝড়ে দু’চোখ বেয়ে..


অবশেষে এলো একদিন ত্রাণ নামের- খাবার
বলা হয়েছে যাদের ছেলে-মেয়ে ইস্কুলে পড়ে- শুধু তাদের জন্যেই আজ বরাদ্দ
বন্যাতো আর ইস্কুলে পড়েনা- ছোট অনেক, এখন অনেকটাই ছোট্ট
অনেক আকুতি করে মেলে দু’টি বিস্কুট আর কিছু পানের জন্যে পানি
হবেনা এতে, হবে না? দিননা হুজুর আরেকটু-
হাহাকার রয়ে যায়-
তবুও যেন নেই কিছুই করার- দেখতে দেখতে মিলিয়ে যায় ত্রাণের বোর্ডটি
আবার হাহাকার আবার ক্ষুধা- আবার চেয়ে থাকা পথ পানে।


হঠাৎ আরেকদিন আসে ত্রাণ- দেখা যায় মাথায় ত্রাণ নামের বস্তা বোঝায় ছোট্ট শিশুর মুখ
মুখে যেন বিশ্ব বিজয়ের হাসি- কিন্তু এ হাসি বিশ্বজয়ের নয়- এ হাসি খাবার পেয়ে, এ হাসি খাবারের জন্যে।
ছোট্ট শিশুটির হাসি দেখে চোখ ভিঁজে যায়-
আনন্দের ক্রন্দনে বুক ফাটার আওয়াজ যেন হয় মলিন-
ছোট্ট শিশুর মুখের সে হাসি- দেখি অপলক দৃষ্টিতে।


খুকিমণি এখন আর কাঁদেনা মায়ের কোলে-
চুপটি করে নাকটি ডেকে ঘুমের দেশে গেছে।


বন্যার্তদের ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছে বোর্ড চড়ে-
এক পলকে চেয়ে বধু- আসবে হেথায় কবে।
বস্তা পঁচা ছেড়া শাড়ি- দান করছে যখন
বৌমণিরা খুশি মনে করছে তাকে গ্রহণ।
খাবার দাবার যেমনই হোক- অঙ্গ ঢেকে রাখা
বস্তা পঁচা হোকনা শাড়ী- দিচ্ছে যখন ওরা।


আমার আছে অনেক কিছুই- ওদের কিছুই নেই-
ওদের জন্যে এখন আমি ত্রাণটি পাঠাই তাই
আমিওতো একটি মানুষ রক্তে মাংসে গড়া-
ওদের কথা ভাবলে মনে, হৃদয় কেঁদে সারা।


মানুষ মোরা আমরা সবাই- ছোট বড় নই
মানুষ হয়ে মানুষ তরে- হৃদয় বিলিয়ে দিই।


(সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৭)
সময়- দুপুর ১২:৩৩


বিঃদ্রঃ ফেসবুকে একটি শিশুর মাথায় বস্তা ধরে এক হাতে আর অন্য হাতে খাবার স্যালাইন ও মুখে দুনিয়া জয়ের আনন্দ দেখে লেখনিটি লেখা। আমার এ লেখনির মাধ্যমে বন্যাদুর্গতদের জন্যে কিছু করবার ইচ্ছা পোষণ মাত্র। লেখনিটি শ্রুতিমধুর নয়। তবুও আপনাদের পাঠের জন্যে পোষ্ট মাত্র। আরেকটি অনুরোধ লেখনিতে যদি কোন শব্দ ভুল হয় তবে অবশ্যই নির্দিধায় সঠিক শব্দটি মন্তব্যে ধরিয়ে দেওয়ার জন্যে অনুরোধ রইলো।