কবীর হুমায়ূন সাহেব...
ঈদে বোনাস পেলেন মনে মনে বেশ খুশি ।যাক এ বছর ঈদ টা বেশ ভালো ভাবে কাটিয়ে দিতে পারবেন।
বাসায় গিয়ে বড় ছেলে কে জিজ্ঞেস করলেন......
_হ্যাঁ রে নিয়ন তোর যেন কত টাকা লাগবে বলেছিলি ?
নিয়ন বিশ্ব্ববিদ্যালয়ে পড়ে ।ঈদে হোস্টেল থেকে বাড়ী এলো সবার সাথে ঈদ করবে বলে ।নিয়ন বলল-
-বাবা ৮০০০ টাকা।কবীর হুমায়ূন সাহেব...ছেলের হাতে টাকা টা তুলে দিয়ে ,মেয়ের কাছে এসে জিজ্ঞেস করলে......
-হ্যাঁ রে মা মনি তোর যেন কত টাকা  লাগবে ?
-বাবা ৭০০০ টাকা ।কবীর হুমায়ূন সাহেবের মেয়ে টুম্পা কলেজে পড়ে।
মেয়ের হাতে টাকা গুলো তুলে দিয়ে ছোট ছেলে জিয়ন এর কাছে এসে বললেন...
-জিয়ন তুমি যেন বাবা কত টাকার কথা বললে ?
-বাবা ৫০০০ টাকা । জিয়ন এই বছর মেট্রিক পাশ করলো মাত্র ।
কবীর হুমায়ূন সাহেবর জিয়ন এর হাতে টাকা গুলো দিয়ে স্ত্রী'র পাশে এসে ঘেসে বসলেন এবং বললেন...
-হ্যাঁ গো তোমার যেন কত টাকা লাগবে বলেছিলে ? স্ত্রী হেসে বলল...।।
_ ৩০০০ টাকা ।আদর করে টাকা টা স্ত্রীর  হাতে তুলে দিয়ে তাঁর রুমে এসে চেয়ার পেতে বসে ভাবতে লাগলেন...
বোনাসের সব ক'টা  টকা ই তো শেষ অল্প যা আছে টা দিয়ে ঈদ চালানো যাবে।এখনো কাজের মেয়ে রহিমার মা বাকি- ঈদে তাকে কিছু দিতে হয়?সামনে পুরো মাস সংসারের খরচ !!নিজের জন্য তো কিছুই নিলেন না ,জুতা জোড়া তো একদম নাজুক মাটির সাথে মিশে গেছে ।চালানো যাচ্ছিলো না ।ভাবলেন এই মাস কষ্ট মষ্ট করে কাটিয়ে দিবেন ।
ঈদের দিন
বড় ছেলে নিয়ন সকাল বেলা বাবা কে সালাম করে বলল
-বাবা এই নাও তোমার উপহার ।কবীর হুমায়ূন সাহেব তো অবাক !!
-কি আছে এখানে ?
-খুলে দেখ না ।দেখলেন এক জোড়া সুন্দর জুতা কবীর হুমায়ূন সাহেব...
ভিষন অবাক হয়ে গেলেন জিজ্ঞেস করলেন
-তুই টাকা কোথায় পেয়েছিস?
-বাবা এইটা আমার টিউশানির টাকা থেকে দিয়েছি বাবা ।এরপর
টুম্পা এসে বাবা কে সালাম করে বলল
-বাবা এই নাও তোমার উপহার কবীর হুমায়ূন সাহেব...
- কি আছে এই খানে ?
- খুলে দেখ না ।কবীর হুমায়ূন সাহেব খুলে তো অবাক একটা সুন্দর শুভ্র পাঞ্জাবী ।বাহ!! খুব সুন্দরব তো !!মেয়ে কে জিজ্ঞেস করলেন
-তুই টাকা কোথায় ফেলি ?
- বাবা আমি যে কলেজে টাকা পেয়েছিলাম তার ই কিছু অংশ বিশেষ ।কবীর হুমায়ূন সাহেব হতভম্ব ।
এবার জিয়ন এসে সালাম করে  বলল
বাবা এই নাও তোমার গিপ্ট... কবীর হুমায়ূন সাহেব বললেন
- কি আছে এই খানে ?
- আহা বাবা খুলে দেখ না !!কবীর হুমায়ূন সাহেব দেখলেন সুন্দর একটা ঘড়ি।কবীর হুমায়ূন সাহেব অবাক হয়ে কেবল জিয়ন এর পানে চেয়ে বললেন.বাহ!! খুব সুন্দরব তো ! কিন্তু
-তুই টাকা ফেলি কোথায় রে ?
-বাবা আমি ভেবেছি প্রতি বছর তুমি আমাদের কেবল দিয়েই যাচ্ছ আমরা কিছুই দিতে পারিনা তাই আমি আমার পকেট খরচ থেকে বাঁছিয়ে ......
এমন সময় স্ত্রী এসে হাজির,সালাম করে বললেন
-এই নাও তোমার উপহার...
-কি এইটা?
-খুলে দেখ না । কবীর হুমায়ূন সাহেব...খুলে দেখে তো অবাক ।অনেক দিন হল তাঁর ছাতা টি রোদে পুড়ে কালো থেকে সাদা হয়ে গেছে ।তাই স্ত্রী'র এমন উপহার দেখে কাঁদো কাঁদো প্রায় .........শেষ ছেলে মেয়ে দের একত্রে জড়িয়ে ধরে আনন্দে কবীর হুমায়ূন সাহেব কেঁদেই ফেললেন ......।
মনে মনে দারুণ সুখ অনুভব করলেন ।
"এই কান্না সুখের কান্না ,এই কান্না ভালোবাসার কান্না "



রচনা কাল
১২।৯।২০১২
বিঃদ্রঃ-আজকের এই কবিতা টি আমাদের কবিতার আসরের সবার প্রিয় কবি কবীর হুমায়ূন সাহেব কে উৎসর্গ করলাম । {ঈদের উপহার}