সেই দিন যদি এই অমলেশ বাবু তাদের আশ্রয় না দিতেন তা হলে কোন
অচেনা স্রোতের বানে ভেসে গিয়ে কোন মহাসাগরে ভিড়তো  তাদের জীব্ন
নোঙ্গর কে জানতো?
ছোট বোন নিপার বিয়ে টা পাকাকাকি করে ফেলেছে রুপা।কুল পাকা ফাগুনে,
ব্রতধ্যান-উপবাসে আহ্নিকে তর্পণে ধূপে দীপে নৈবেদ্যে চন্দনে বর নিপার
ললাটে সিঁদুর পড়িয়ে দিলো।নিপা পালিতা বাবা-মা এবং  দিদির পদধূলি নিয়ে
লাল বেনারশি শাড়ি পড়ে,রুপা কে অঝর কাঁদিয়ে চলে গেলো পতি দেবালয়ে।
নিজে কে সমর্পিলো পতিদেবের পদ্মকরতলে।
রুপার ভাসা ভাসা আঁখিজলে সুখের নিবাস।তার বাবা-মায়ের কাজ গুলো সে
অন্তত কিছুটা পূর্ণ করতে পেরেছে।আজ নিপা কে বড্ড মনে পড়ছে রুপার।
হৃদয়ে লালিত স্বপ্ন জেগে উঠে খরতর রৌদ্রের ন্যায়।তিমিররজনী চিরস্মৃতিময়ী
ধ্রুবতারকার বেশে পুরনো সব কথা আজ কেন যেন বারংবার। নয়নসলিলে
কান্নার রোল। কি ভেবে, খোঁজ নিয়ে মৌ কে ফিরিয়ে আনলো।নিজে দাঁড়িয়ে
থেকে তাদের জনম জনমের বন্ধনে বেঁধে দিলো।যুগলপ্রেমের স্রোতে ভাসিয়ে
দিলো মিলনমধুর ফুলশয্যায়।
রুপা নিজে কে নিয়ে ভাববে না,এমন প্রশ্নে,সে মোটেই বিচলিত নয়।নিখিলের
সুখ নাইবা পেলো প্রাণের প্রীতিতে,নিজেকে মিলনমধুর বিছানায় নাইবা নিলো
পতিপরশে।ক্ষতি কি ভাই বোনদের তো মানুষ করতে পেরেছে।তার বরাবরই
একই উত্তর আমি ছাতনাতলায় বসলে ওদের কে দেখবে?


রুপার অফিস খুব একটা দূরে নয়।ভীষন ব্যস্ত আজ রুপা,অনেক দিনের জমে
থাকা কাজ করতে হচ্ছে ।এরি ফাঁকে অফিস বয় এসে দুটি লোক তার দেখা
করতে এসেছে ,বলে গেলো।কিন্তু ব্যস্ততার খাতিরে সম্ভব হয়ে উঠছে না।
কে জেন দরজায় টোকা দিলো।"ইয়েস কামিং"
রুপা চোখ তুলে তাকাতেই নয়ন সিক্ত আঁখিনীরে স্রোতের ঢেউ খেলে গেলো
আঁখি তে উচ্ছ্বাস,মনে উল্লাসের ঢেউ মনভুলানো কিছুক্ষণ নীরবে কাটলো,রুপা
ভাইদের জড়িয়ে কেঁদে ফেললো,ভাইদ্বয় মার্জনা প্রার্থনা করতেই,রুপা-"ছিঃ দাদা
আমায় তোমরা অপরাধী করো না তোমাদের অনপুস্থিতে আমার দায়িত্ব পালন
করেছি মাত্র।বড় দাদা অশ্রুনয়নে নত শিরে, বলে উঠলো-"রুপা বোন আমার
তুই যদি আমার ছোট না হয়ে বড় হতি তাহলে  তোকে আমি  একটা প্রণাম
করতাম"দাদার এমন কথায় রুপা দাদাদের পদতলে পড়ে কেঁদে চরণ ভাসালো।
খবর পেয়ে ছোট ভাই-বোনেরা-পালক বাবা-মা তাঁরা চলে এলো।রুপা বাইরে
বৌদিদের অদুরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তাদের কে ডেকে বুকে জড়িয়ে নিলো।
সবায় আজ মহাখুশি।সবায় মহাআনন্দে মত্ত যখন তখন অমলেশ বাবু ঘোষনা
দিলেন-এই শুন সবায় এবার আমাদের কাজ হচ্ছে আমাদের "কন্যাকুমারীর"
জন্য উপযুক্ত রাজকুমার খোঁজার ।
রুপা লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।


রচনা
০৩।০১।২০১৩
প্রিয় সাহিত্য প্রেমী,কবিতা প্রেমী পাঠক/ পাঠিকা এবং সম্মানীত  কবি গণ আমি
এই "কন্যাকুমারী" গদ্য কবিতা টি কয়েক টা সিরিজে সাজাতে গিয়ে আপনাদের
কাছ থেকে যে প্রেরণা,এবং সাহস পেয়েছি তার সূত্র ধরে আমার এত দূর আসা।
তা না হলে কিছুতেই সম্ভব হতো না এই জন্য আমি আপনাদের অনেক ধন্যবাদ।