দেবীকে


সুধীর দাস


দেবী,
তোমার রাঙা চরণ বুকের রক্তে রাঙ্গিয়ে যাই। চোখের জলে ভিজিয়ে দেই ফুল তুলসী ধান দূর্বায়। নিঃস্ব হৃদয়ে প্রার্থনা সংগীত বারবার বেজে ওঠে তোমার সুর। কত না বসন্তেরই সেইসব দিনগুলো চোখের তারায় আঁধারের কাজল রেখা আঁকে।
নক্ষত্রের আকাশ থেকে যখন তুমি এলে আমার বুকের পরে। আমি তখন হয়েছিলাম আত্মহারা।
চরণ ছুঁয়ে বুকের সামিয়ানায় রেখেছিলাম।
কিন্তু বাঁধতে পারেনি বুকের দরদ দিয়ে।


উল্কার মতো হারিয়ে গেলে আবার সেই অজানা দিগন্তে। এভাবে কতনা বসন্ত হারিয়ে যায় বসন্তের না ফোটা ফুলের কলিতে। আমি তাই যে চির নিঃসঙ্গ, সেই নিঃসঙ্গ‌ই রয়ে গেলাম চির অজানায়।


দেবী,
কষ্টের কষ্টিপাথরে শান‌ বাঁধানো এ বুক। চিরদিন শুধু ক্ষয়ে ক্ষয়ে যায়। এ বুকে অপেক্ষার ফুল ফোটে। জীবনের অযাচিত ভুলের প্রায়শ্চিত্ত হয়।
আতপ চালের পিণ্ড হয়। যুগ যন্ত্রণার শিকারে শরবিদ্ধ আত্মা ব্যাকুল হয়ে ওঠে ব্যর্থতা আর হতাশার গ্লানিতে।


কোনদিন হয়তো তুমি টের পাবে না। কেননা তুমি তো পাথরের মূর্তি। অভিমানিনী। এত অভিমান তোমার বুকে। কত আঘাত শয়ে শয়ে তুমি যে আজ দেবীর প্রতিমা।


দেবী,


যতবার তোমাকে আঘাত দেই। ততবার তুমি মৃন্ময়ী  প্রতিমা। ততবার তুমি নিথর নিস্তব্ধ নিঃসঙ্গ পথিক, অথচ তোমার বুকে নক্ষত্র ছুঁয়ে যায় পরম জ্যোতিষ্কের আলোকে। আকাশের বুকে মেঘেদের মিনারে নামে তোমার অন্তর ছুঁয়ে। আমি শুধু অবাক হয়ে ভেবে যাই। কত যুগ যুগ ধরে তোমার সাধনা করেছি, কত শতাব্দী ধরে তোমার প্রার্থনায় মগ্ন থেকেছি, শত দুঃখে শত কষ্ট আঘাত দিতে দিতে তোমাকে করে তুলেছি স্বর্ণপ্রভা।


যে স্বর্ণপ্রভার আলোকে আমি বার বার হারিয়ে যাই তোমার আলোর জ্যোতিতে। তবুও আমি চিরদিন চিরকাল অন্ধকারের বাসিন্দা। তোমার আলোর শিখায় হয়তো আজও আমি বেঁচে আছি। বেঁচে থাকব হয়তো অনন্তকাল।


কিন্তু তুমি ছাড়া
আমি যে চিরদিন  ভূমি ছাড়া।
তোমাকে নমস্কার হে দেবী।



১৮,০১,২১