যামিনী, জ্যোৎস্না দিয়েছে ছড়ায়ে,
সুস্নিগ্ধ রোশনাই,
আলোকিত স্রোতে অবগাহনে
আজ কারো দোষ নাই।
মেতেছে আজিকে চতুর্দিকে
মদিরা লিপ্ত ছন্দ,
আনন্দে গ্রাম মুখরিত আজ,
উল্লাসে নিঃস্পন্দ।
গীতি-বাদ্যে-নৃত্যে-আমোদে
রসময়রূপী সাজ—
সেজেছে পলাশে, মেতেছে বিলাসে,
বসন্ত ঋতুরাজ।


উড়ছে আবীর আকাশ দাবীর
শারীরি আস্তরণ-
ছুঁয়ে দিয়ে যায় মন, যেন ঠিক
প্রণয়ী আভরণ।
আবেগে বিগলী আকুলি বিকুলি
মনোরম অনুভব,
তারই ইশারায় আকাশ তারায়
ভরিয়ে দিয়েছে নভ।
জোনাক জ্বলা স্বপ্ন আঁধারে
মশালের গাঢ় বহ্নি—
মলয় দাপটে নৃত্যে মেতেছে
যেন সে যুবতী তন্বী।


বাসন্তীবাস করেছে উদাশ
হারিয়ে দিয়েছে মন,
তবু কেন যেন ভিন্নকারণে
দুঃখী ব্রাত্যজন।
হতে পারে সুখী বসন্তরাজ,
প্রজাবৎসল — নয়,
সারাটা বছর অনাহারে রাখে
অভাবে অবক্ষয়ে।
পেটে ভাত নেই, মলিন বসন,
পথে পড়ে কাটে রাত,
হতদরিদের শুধুই জোটে
ঘৃণা- অভিসম্পাত।


হে ঋতুরাজ, রসরাজ তুমি
ফাল্গুনী  উপহার,
তোমার তেজস্বিতায় দীনের
নেই কোনো প্রতিকার?
আমরা তোমায় আহ্বান করি
যত দূর সম্ভব,
সব ভুলে গিয়ে, ঘটা করে করি
বসন্ত উৎসব।
আর তুমি কিনা, ফিরেও দেখনা
আমাদের মুখ পানে—
দিনে দিনে যারা এগিয়ে চলেছি
মৃত্যুর সন্ধানে।


হে মহারাজ, জেনে রাখ আজ
আমরা না মরা দীন;
প্রতিবাদ যদি জেগে ওঠে রাগে...
ফুটবেই একদিন,
(আর) সেদিন তুমি পার পাবেনা;
হে প্রকৃতির রাজা,
অধমের হাতে সইতেই হবে
নরকযাতনা সাজাI
কোকিলেরও টুঁটি ছিঁড়ে নেব টেনে
যে, তোমার আমন্ত্রক,
(আর) জানবে সেদিন বিশ্ব তোমায়
আসল প্রবঞ্চক।


গুছিয়ে আখের, নিজের সুখের
আদ্যপ্রান্ত বুঝে
উচ্ছিষ্ট পড়ে থাকে যা, আমাদের
মুখে গুঁজে
ক্ষান্ত কর তোমার দায়ের ভার!
অন্ন বস্ত্র বাসস্থানে
বঞ্চিত আজ যারা, মোচ্ছব লাগে
কিসের প্রয়োজনে?
পার্থিব ভাগ পেতে চাই রাজা
যোগাতে পারলে পারো
নচেৎ, সুখে থাকবে না আর
তোমার সংসারও।