অজ্ঞাত কুটীরেতে জন্মিল এক শিশু
মা-বাপ - দাদুতে তার নাম রাখিল বিশু
দেখতে কালো কুচকুচে তবে দুষ্টু সে খুব
চার বছরেই সে জ্বালায় সন্ধ্যারতির ধূপ
সংস্কৃত শিখতে চাইত, পকেট গড়ের মাঠ
মাস্টারের অনীহাতে তার চুকল পরার পাঠ
দোকানেতে কাজ করে করত উপার্জন
মাসের শেষে হত দুই টাকা,তাও করত দেবতায় সমর্পণ
বছর কুড়ি বয়স যখন মা গেল ওপার
তার মাসখানেক পর বাপও পগারপার
একা যদি থাকত তবু নাই হত চিন্তার বিষয়
ছোট বোনের জন্য তাকে বাঁচাতে হবে বিষয়- আশয়
ভেবে কুল না পেয়ে হাত পাতল শেষে
নামকরা নেতা পয়সা তার হাতে তুলে দিল কুটিল হাসি হেসে
বোনের বিয়ে কোনমতে সারা হল মাসখানেক পর
একবছরের মাথাতেই বোনের অসুখ বাঁধিল, বহু ওষুধ পথ্যিতেও থামিল না জ্বর
একদিন সকালেতে খবর এল বোন আর নেই
ওদিকে শ্মশানেতে কাজ শেষে সেই নেতা বলে- "আমার টাকা কই"
বিশু বলে- "বাবু, একটু সময় দেন, গরীবেরে দয়া করেন "
নেতা বাবু বলল -"তোর যা আছে আমার নামে লেখ, দিচ্ছি পেপার আর পেন"
বিশু বলল -"বাবু, আমার কিছুই তো নাই, সব তো বোনের বিয়েতে গেছে"
বাবু বলল-"আমার দলে যোগ দে তাহলে, এই একটাই উপায় আছে"
অগত্যা বিশু ভিড়ে গেল বাবুর দলেতে
হপ্তা তুলতে গেল স্কুলের হলেতে
মাস্টার চিনতে পারল, বলল -"তোকে তাড়িয়ে ঠিকই করেছিলাম"
বিশু বলে-" ওই তাড়িয়ে দিলেন বলেই সব হারালাম"
মাস্টার কিছু বলার আগেই বিশু তাকে মারল এক চর
স্কুলের কাছে হপ্তা নিয়ে বাজারে গিয়ে বলল-"এই তোরা সব হপ্তা বের কর"
ঘর- বাইক কিনে হয়ে উঠল মন্ত্রীমহলের খাস
বছর পঁয়তাল্লিশ বয়স যখন খেল একদিন গুলি
ভর্তি হল নার্সিংহোমে আর মনে মনে বলল-" যে করেছে এটা, ওড়াব তার খুলি "
দুদিন পরে নার্সিংহোম ছাড়ল তাকে বাড়ি
যে গুলি করেছে, জানা গেল সে ধরা পড়েছে, পরনে তার শাড়ি
মেয়েটি আসলে ওই মাস্টারমশাইয়ের একমাত্র কন্যা
চোখে তার আগুন জ্বলছে, বাপ করেছে আত্মহত্যা, আর নামটি তার বন্যা
বিশুর দল মাস্টারের বাড়িতে চালিয়েছিল লুটপাট
সব টাকা আর গয়নাগাটি লুটে, বাদ রাখেনিকো জানলার কাঠ, আর শোবার খাট
এহেন ক্ষতি সহ্য হয়নি, তাই মাস্টারমশাই বেছে নিয়েছেন মৃত্যুর পথ
খুন করবে বিশুকে, বন্যা তাই নিয়েছে মরণ শপথ
বিশু ছাড়িয়ে আনল বন্যাকে সবারে চমকে দিয়ে
বিয়ে করে তাকে ঘরেতে আনল, টোপর মাথায় দিয়ে
মেয়ের মাথায় ঘুরছিল শুধুই প্রতিশোধ, রয়েছে ভীষণ ক্ষোভ
প্রথমদিনেই চায়েতে বিষ, খোলা রেখে দিল স্টোভ
ফেনা বেরোল বিশুর মুখ দিয়ে, ওদিকে জ্বলল গোটা ঘর
ছুটে এসে জলে নেভাতে লাগল আগুন কিবা আপন কিবা পর
অর্ধদগ্ধ বন্যা উদ্ধার হল পোড়া ঘরের ভেতর থেকে
কিন্তু বিশু শেষ, আর উঠবে না, বলবে না আর "চল ভাই" সবাইকে ডেকে
মাসখানেক পর বন্যা ফিরল হাসপাতাল থেকে
বিশুর বউ ঘরে ফিরেছে মাইকিং করল হেঁকে
কিন্তু তার বেঁচে থাকাই সার
উঠতে বসতে পারে না, পুরো শরীর অসার
একালের সব খেটে খাওয়া মানুষের ভাগ্যের ফের এমন
'বুভুক্ষুর মহাকাব্য' আমার তরফ থেকে শয়তানদের কোর্টের সমন।