এখন আর বিশ্রাম নিতে ভালো লাগে না।
শ্রম তো করিনি তেমন কিছুই, চল্লিশ বসন্ত পার;
ছুটেছি অনেক, খেটেছি প্রবল, ঘেমেছি, তবুও---
শ্রমিকের, কৃষকের, ঠ্যালা ওয়ালার শ্রমের কাছে,
গাঁইতি, কোদাল, কুঠার চালানো শরীর,
অথবা কারখানায় ঘামে ভেজা শরীর গুলো
যে শ্রম দেয় সভ্যতার গতিধারায়---
আমার শ্রম কি আর তার ধারে কাছে যায়?!
তাই আর বিশ্রাম নিতে মন লাগে না, ভয় হয়;
                                সময় যে বয়ে চলে যায়।


প্রত্যেক ভোরে নতুন সূর্য্যদয় জানান দেয় --
আর মাত্র একদিন বাকি, দিন শেষ হতে;
পরের দিন সূর্য্যের সাথে দেখা হবে কি না হবে--
যা কিছু বাকি, করে ফেল যতটুকু পারো,
তার পরে রাঙা পলাশ-কৃষ্ণচূড়ার বসন্ত আসবে
ঠিক সময়েই, সেই সময়ে তুমি যদি নাই থাকো আর?
যদি বিশ্রামের আতিশয্যে নষ্ট করে ফেল অমূল্য সময়,
বকেয়া কাজের খতিয়ান যদি কমাতে না পার,
তবে এ জীবনে মেহনতী হওয়া হবে না আর।
                               সব বসন্ত হয়ে যাবে পার।


সময় অল্প, সীমিত, সেই জন্মের পর মুহূর্ত থেকেই।
প্রতি মুহূর্তে নক্ষত্র গুলো পুড়ে পুড়ে হালকা হয়ে যায়,
বিনাশের ভয়ে আরো আরো চেপে ধরে নিজেকে,
নষ্ট করার মত এক মুহূর্তও নেই যে সময়--
স্বল্প, নগন্য আয়ু মানুষের, আরো কম মনুষ্যত্বের;
সেই স্বল্প সঞ্চয় কে খরচ করতে হবে হিসেবে,
যতটা দেওয়ার আছে সংসারে, সবটুকু দিতে হবে;
বিশ্রামে যদি চলে যায় দিন, রয়ে যাবে ধার--
সমস্ত জীবন তখন ব্যর্থ, নিষ্ফল হয়ে যাবে শেষে--
                             সময় চলে যাবে মুচকি হেসে।


এখনো যতটা ঘাম ঝরানো যায়, অথবা কলমের কালি,
অথবা মগজের ঘিলু মন্থনে যেটুকু বুদ্ধি ভেসে ওঠে,
অথবা মাঠে-ঘাটে-বাটে যতটা ঠ্যালা দেওয়া যায়,
চারপাশের ঘুমন্ত, নিশ্চুপ দের যদি জাগানো যায় ভোরে--
যদি জমে থাকা পাপ, অন্যায়, অভিশাপ মুছে ফেলা যায়,
অথবা জাগাতে পারি কারো মুখে হাসি, মোছে অশ্রু--
যদি পাথর কেটে আগামীর পথ গড়ে তোলা যায়;
আমার থামার পরের সকাল গুলোও যেন সুন্দর হয়--
সেই কাজ শেষ হওয়া চাই, নাহলে মরাও বেকার--
                                জীবন আসবে না ফিরে আর।।
                   -------◆-------
চুঁচুড়া, ২২/০৪/২০২১