বন্ধু , শুনতে পাচ্ছ কি পৃথিবীর আর্তনাদ?
রুগ্ন- জড়া- অসহায়ের ভারে নুয়ে পড়া
ধরিত্রীর বুকে তোমার অট্টালিকা- কখনও কি
কেঁপে ওঠে নাই সীমাহীন দাম্ভীর্যের ভারে?
তোমার প্রাচুর্যের হিমাগারে সঞ্চিত একফোঁটা
আত্মপ্রসাদ পচে গিয়ে দুর্গন্ধ ছড়ায় নি কি কখনও?
অন্ধ আবেগের পথ হারানোর বেদনায়
ঝাপসা হয়ে ওঠে নি কি তোমার দুচোখের তারা
কোন এক দিন?
এর উত্তর জানতেই তো এসেছি আজকে ভিক্ষুক বেশে
বারবার কড়া নাড়ছি দরজায় আর্তের দাবী নিয়ে।
বন্ধু, ফেরাবে না জানি তবু কেন দেরি দ্বার খুলবার?
তুমিও তো উঠেছিল একদিন মেরাজ আলীর রিকশায়
সন্তান পরিত্যাক্ত ষাটোর্ধ বুড়ো ঠকঠক করে ধরে
রিকশার হাতল। তুমিও তো দেখেছিলে অথবা
বেখেয়ালে চোখে পড়ে নি তার দগদগে পা- বয়সের ভারে
রক্ত আর পুঁজের বন্যায় ভাসিয়েছে পুরো রাস্তা।
আজ আমি তারই দাবী হাতে এসেছি তোমার দরজায়।
বন্ধু ফিরিয়ে দিবে কি? জানি আমি দিবে না
তবু কেন দেরী দ্বার খুলবার ?
তুমিও তো চাপিয়েছিল বোঝা দেড় মণ ভারী
রুগ্ন গফুরের মাথায়- ক্ষুদার্ত শরীরের দাবী নিয়ে
বারবার কেঁপে উঠেছিল তার পাকিস্থলি।
তুমিও তো দেখলে অথবা বেখেয়ালে চোখে পরল না।
রক্তমাখা ঘামে ভাসিয়েছিল সে পুরো রাস্তা।
যে মাথা অনায়াসে বয়ে দিল দেড় মণ বোঝা
একছটাক টিউমারের ভার আজ বইতে পারে না সে মাথা।
সন্তান তার না খেয়ে আছে ।
আজ আমি তারই দাবী হাতে নেড়েছি তোমার দরজার কড়া।
বন্ধু ফিরিয়ে দিবে কি? জানি আমি দিবে না
তবু কেন দেরী দ্বার খুলবার ?
যুগে যুগে যাদের আর্তচিৎকারে বেড়েছে পৃথিবীর ভার
তাদের মিছিল আজ ভিড়েছে তোমার প্রাচুর্যের সীমানায়
করুণা নয় দাবী হাতে এসেছে তারা
বলছে বারবার দ্বার খোলা রাখবার।
বন্ধু, হয়তোবা তুমি অক্ষম
জীবনের গুণ টেনে টেনে হও ক্লান্ত ভীষণ।
তবে অবসরে এক ফোঁটা জল নিয়ে এস তুমি।
তোমার চোখের জলই পুরোবে আজকে আর্তের দাবী।