গলা পর্য্যন্ত ভয়ে ডুবে
আশরীর কেঁপে যাই আমি!
কাঁপতে কাঁপতে দাতকপাটি;
পায়ের পাতা থেকে ধীরে ধীরে
সে গ্রাস করে আমার সম্পূর্ণ শরীর...
একটু একটু করে,
মস্তিষ্ক বিকল,
হাত - পা শীতল,
নখাগ্র নীল!


কাঁপা কাঁপা, ভেজা ভেজা দু-হাত দিয়ে
প্রাণ-পণ চেষ্টা করি, তাকে ঠেলে নামিয়ে
এক বুক শ্বাস নিতে - পারিনা।
আমার কন্ঠা শুকিয়ে আসে,
জিভ জড়িয়ে যায়
দুই ঠোঁট রক্তশুন্য!


তখন মিনতি করি-
'ও ভয়, ভয়মনি, যাদুসোনা,
এবার আমাকে ছাড়ো, লক্ষীটি;
সত্যি বলছি, তোমার সঙ্গে পাল্লা দেবার
কোনও শক্তিই আমার নেই।'
আমার দূর্ব্বলতায় সে হো হো হাসে,
পৈশাচিক ক্রুরতায় আবার চেপে ধরে
বহুবর্ণ গিরগিটি বা মুখোশধারী বহুরূপীর মত!


মুখোশ পালটে পালটে ভয় দেখায়;
এক এক সময় দৃঢ় বিশ্বাস জন্মায় -
আত্মার মত ভয়ও অবিনশ্বর।
জন্ম নেই, মৃত্যু নেই, আছে শুধু রূপান্তর।
অন্ধকারে ভয়, উচ্চতায় ভয়, রক্তপাতে ভয়;
টাকা থাকলেও ভয়, না থাকলেও ভয়;
নামে ভয়, বদনামেও ভয়;
জীবনে ভয়, মৃত্যুতেও ভয়;
নিশ্চিন্ত জীবনের কামনা
প্রতিপদে মার খায় ভয়ের হাতে।


এরই মধ্যে একেক দিন অন্যরকম হয়-
সকাল থেকে মনটা চনমনে থাকে,
ভয়ের চাদরটা সরিয়ে দিয়ে হাত-পা ছাড়াই,
মুসুরির ডাল আর মাছের ঝোল দিয়ে এক পেট ভাত খাই,
সন্তানের মুখে চুমো দিই, আর
স্ত্রীর চোখে দাম্পত্যের ভরসা খুঁজে পাই;
পছন্দের গান দু-এক কলি তুলে নিই গলায়।
মনকে চোখ ঠেরে বলি, আর না
এবার আমাকে রাহুগ্রস্ত করতে সে আসে যদি,
নির্বাসন দেবো তাকে আন্দামানে।


এমন সময়, হা-রে-রে-রে...
পিছন থেকে জাপটে ধরে,
টানতে টানতে আমায় নিয়ে ফেললো, সে
চোরাবালির গহ্বরে।
নিরূপায় আত্মসমর্পণের মুহূর্তে
মনে মনে আওড়াতে থাকি-
'বল বীর, উন্নত মম শীর...'
'আমি ভয় করবো না...'
'বিপদে মোরে রক্ষা করো...'


কিন্তু কাঁপা স্বর আর জড়ানো উচ্চারণ
কোনো ভরসাই জাগাতে পারে না...


তখন অন্তিম সময়ে হঠাৎই মাথায় বিদ্যুৎঝলক-
ভয়ের সঙ্গে আমার এই সহবাস,
এ তো চলবে আমরণ;
তাই ভয়ের গলা জড়িয়ে ধরে
ওকেই করি প্রেম নিবেদন।।