আজ পঁচিশে ডিসেম্বর। মনে পরে নীলাদ্রি? একবছর আগে ঠিক আজকের দিনেই আমাদের ডিভোর্স হয়েছিল। আজ দুপুরে ট্রেনে অফিস যাওয়ার পথে তোমাকে দেখলাম। একপলক যা দেখলাম মনে হলো বেশ রোগা হয়েছো, চশমার ফ্রেমটা বদলেছো। খোলা শার্টে বুকের লোমে পাক ধরেছে, অদ্ভুত এক নির্লজ্জের মতো তাকিয়ে ছিলাম তোমার দিকে। যেদিন প্রথম আমাকে দেখতে এলে তখন সবে উচ্চমাধ্যমিক দিয়েছি --আমাকে প্রথম দেখাতেই তোমার পছন্দ হলো। তোমার মা বাবা বললেন --কোনো টাকাপয়সা ছাড়াই বিয়েতে রাজি। তারপর ধীরে ধীরে তোমার কাছে আসা, তোমার জন্মদিনে রাতজেগে প্ৰিয় রুমালে তোমার নাম খোদায় করা, আমার অঙ্কিতা নাম থেকে তোমার পছন্দের লাবণ্য হওয়া, তোমার পছন্দের ইংরেজি বই পড়তে শেখা, ভীড় বাসে তোমার হাত খুঁজতে থাকা, কোনো আড্ডায় মশগুল থাকলেও তোমার নাম এলে হৃদ্স্পন্দন বেড়ে যাওয়া,
এসবই কিঞ্চিৎ দুঃসাহস করেই করে ফেলা।


যেদিন তুমি ছেড়ে গেলে মনে হলো আমার থেকে দুর্বল, অসহায় মানুষ বোধই  এই পৃথিবীতে আর কেউ নাই। তুমি ছেড়ে যাওয়ার পরে আর কোনো মানুষ আমার সঙ্গে সংসার করবে বলে আসেনি, তা নয়। কিন্তু জানো, ঠোঁটে তুমির অভ্যাসটা আজও পাল্টানো গেলো না।
কে বলেছে ছেড়ে গেলে সব শেষ?
কে বলেছে বিচ্ছেদ মনের সম্পর্কে আসে ইতি?
ডিভোর্স পেপারে ইংরেজি শব্দগুলো পড়তে পড়তে আমার চোখ ভিজে যায় --মনে হয় তোমাকে বলি --আচ্ছা, আগের মতো সব ঠিক করে নেওয়া যায়না?
তোমাকে অন্তত আর কিছুক্ষন থাকো বলে আটকাতে পারিনি।
আমি আর তোমার লাবণ্য থেকে অঙ্কিতা হতে পারিনি। অনেকটা দেরি হয়ে গেছে ----
আকাশ থেকে মাটি, আগুন থেকে বার্নল, ইচ্ছে থেকে পাখি আর তোমার পাশে একদিন কিংকর্তব্যবিমূঢ হয়ে বসে থাকার সময়গুলো এভাবে পালাতে পালাতেই পৃথিবীর বয়স আরো বিশবছর বাড়বে। আমাদের ভিন্ন গাছের পাখি এক আকাশে উড়বে --ঝোড়ো বাতাসের ঝাপ্টা লাগবে জানলায়। শুধু আমাদের দুটো  ছাদ আর এক হবে না।
শীত করবে, বৃষ্টি পড়বে মনকেমনের বারান্দায় --
শুধু তোমাকে অন্তত আর কিছুক্ষন থাকো বলার ইচ্ছেটাও হয়তো একদিন মরে  যাবে।