রূদ্র,
অনেক কষ্ট করে তোমার ঠিকানাটা জোগাড় করেছি
কিভাবে করেছি, কে দিয়েছে, এসব তোমার না জানলেও চলবে। কেমন আছো আর জিজ্ঞাসা করছি না, জানি ভালো আছো। তোমাকে চাইলেই ফোন করতে পারতাম কিন্তু প্রথম প্রেমের মতো মিষ্টি করে অভিনয় করতে পারবো না। এই ই -কমার্সের যুগে শুধু তোমাকেই চাই বলে দাবি করতে পারবো না। জানি অনেক দূরে আছো, ভালো আছো। এই বোকা প্রেমিকার খোঁপায় গুজে দিতে হবে না অপ্রত্যাশিত অপরাজিতা। এই ডিসেম্বরের রোদেরা ব্যস্ত রাস্তা ধরে কোনো নিঃসঙ্গ বিকেলের ছাদে তোমাকে ছুঁয়ে চলে যাবে। শুধু আমাদের আর পরস্পরকে ছুঁয়ে দেখা হবে না। আচ্ছা আবার নিশ্চয়ই সিগারেট খাওয়া ধরেছো? আবার রাত জাগো, ঠিক সময় ওষুধ খাওনা জানি। ব্যস্ত রাস্তায় কানে হেডফোন নিয়ে চলো নিশ্চই। দীর্ঘ আটবছর আমরা সংসার করলাম। কোনো সরকারি কাগজপত্র, ট্যাম্প, চুক্তিপত্র ছাড়াই আমাদের বিচ্ছেদ হয়েছিল। কেন জানি না তোমার আর সহ্য হলো না আমার সুপরিচিত ঘ্রান। জানি চাইলেই তুমি ছেড়ে যেতে পারো দূরবহুদূর -তাই গিয়েছো। যেদিন প্রথম ভালোবাসি বললে কি স্বতঃস্ফূর্ত, যেন আমি হরিণ, ছুটছি, খেলছি, ঘনঘন সাজছি তোমার জন্য নুপুর পড়ছি, জোর করে শাড়ি পড়ছি, চুরি পড়ছি, দু একটা তোমার পছন্দের   কবিতার লাইন মুখস্ত করছি, শুধু তোমার জন্য। তোমার সামর্থ নেই জেনে গাড়ি ছেড়ে হাঁটতে শিখেছি, তোমার পছন্দের বাংলা গান শুনেছি, আয়নার সামনে বোকার মতো নিজেকে দেখেছি। কিন্তু  তুমি ছেড়ে যাওয়ার পরে আর নিজের অস্তিত্ব বুজিনা। রাস্তায় হাঁটতে পারি না। বুকের বাঁপাশে ঘনঘন ব্যথ্যা করে, রিকশা লাগে। শিরায় শিরায় টান ধরে, শাড়ি পড়তে ভুলে গেছি, আয়নার সামনে যায় না। রাস্তায় প্রেমিক প্রেমিকা দেখলে মুখ ঘুরিয়ে নিই।
ও দেখছো কথায় কথায় আসল কথাটায় বলা হয়নি -আমার ক্যান্সার.... ডাক্তার বলেছে আর কয়েকদিন... চোখের তলায় কালি পড়েছে, রাতে ঘুম আসেনা --তুমি নেই তো কি হয়েছে? তোমার দেওয়া শোক স্বজন, শূন্যতা, নিষ্ঠুর ফর্মালিটি আছে। ভালো থেকো রূদ্র, নিজের যত্ন নিও।
আর হ্যাঁ চিঠির উত্তর দিও না.... কেন, কি কারণ জানতে চেও না..


                ইতি
                       তোমার
                                  অপ্রিয় অসুখ