নগরলক্ষ্মী
                রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর  


  নগরলক্ষ্মী
   কল্পদ্রুমাবদান


       দুর্ভিক্ষ শ্রাবস্তীপুরে যবে
       জাগিয়া উঠিল হাহারবে,


বুদ্ধ নিজভক্তগণে     শুধালেন জনে জনে,
     'ক্ষুধিতের অন্নদানসেবা
      তোমরা লইবে বল কেবা ?'


      শুনি তাহা রত্নাকর শেঠ
      করিয়া রহিল মাথা হেঁট ।
কহিল সে কর জুড়ি,     'ক্ষুধার্ত বিশাল পুরী,
       এর ক্ষুধা মিটাইব আমি
       এমন ক্ষমতা নাই স্বামী ! '


        কহিল সামন্ত জয়সেন,
        'যে আদেশ প্রভু করিছেন
তাহা লইতাম শিরে      যদি মোর বুক চিরে
       রক্ত দিলে হ'ত কোনো কাজ—
       মোর ঘরে অন্ন কোথা আজ ! '


       নিশ্বাসিয়া কহে ধর্মপাল,
      'কী কব, এমন দগ্ধ ভাল,
আমার সোনার খেত      শুষিছে অজন্মা - প্রেত,
       রাজকর জোগানো কঠিন —
       হয়েছে অক্ষম দীনহীন ।'


       রহে সবে মুখে মুখে চাহি,
       কাহারো উত্তর কিছু নাহি ।
নির্বাক্‌ সে সভাঘরে    ব্যথিত নগরী - ' পরে
       বুদ্ধের করুণ আঁখি দুটি
       সন্ধ্যাতারাসম রহে ফুটি ।


       তখন উঠিল ধীরে ধীরে
       রক্তভাল লাজনম্রশিরে
অনাথপিণ্ডদসুতা      বেদনায় অশ্রুপ্লুতা,
        বুদ্ধের চরণরেণু লয়ে
        মধু কণ্ঠে কহিল বিনয়ে —


       'ভিক্ষুণীর অধম সুপ্রিয়া
       তব আজ্ঞা লইল বহিয়া ।
কাঁদে যারা খাদ্যহারা      আমার সন্তান তারা,
       নগরীরে অন্ন বিলাবার
       আমি আজি লইলাম ভার ।'


       বিস্ময় মানিল সবে শুনি —
       'ভিক্ষুকন্যা তুমি যে ভিক্ষুণী !
কোন্‌ অহংকারে মাতি         লইলে মস্তকে পাতি
      এ-হেন কঠিন গুরু কাজ !
      কী আছে তোমার কহো আজ ।'


       কহিল সে নমি সবা-কাছে,
       'শুধু এই ভিক্ষাপাত্র আছে ।
আমি দীনহীন মেয়ে        অক্ষম সবার চেয়ে,
       তাই তোমাদের পাব দয়া —
       প্রভু-আজ্ঞা হইবে বিজয়া ।


       'আমার ভাণ্ডার আছে ভরে
       তোমা-সবাকার ঘরে ঘরে ।
তোমরা চাহিলে সবে      এ পাত্র অক্ষয় হবে ।
       ভিক্ষা - অন্নে বাঁচাব বসুধা —
       মিটাইব দুর্ভিক্ষের ক্ষুধা ।'


         ()=_=-=*=-=_=()


এই কবিতাটি  প্রথম পড়েছিলাম অষ্টম শ্রেণীর পাঠ পুস্তকে ।
সত্যিই এই কবিতাটি পাঠ করলে বিশেষ অনুপ্রেরণা পাই ।