ঝরা পাতার মরমর মাড়িয়ে
নতুন দিনের আহ্বানে ফের জেগেছে ভোরের সূর্য।


সুর তুলেছে প্রাণে, 'সব কটা জানালা, খুলে দাও না
আমি গাইবো, আমি গাইবো বিজয়েরই গান।
ওরা আসবে, চুপি চুপি
যারা এই দেশটাকে, ভালোবেসে,
দিয়ে গেছে প্রাণ'।


খড়হীন দাওয়ায় উদাসিনী মা
দখিন বাতাসে উড়ছে তার ফিনফিনে চুল
চোখের তারায় গুনছে উজ্জ্বল আলোর দিন
তপ্তদীর্ঘশ্বাস, খোকা আর কত প্রহর গুনলে
হবে তোর আসার সময়?
বলেছিলি, তুই আসবি কথার ঝুলি নিয়ে
তুই আসবি ভোরের পাখির গান হয়ে
তুমি আসবি বৃষ্টিকে স্বাগত জানিয়ে
সবুজ সোনালী ফসলের হাসি হয়ে।
মেঘের আড়ালে সূর্য তো রোজ আলো ছড়ায়
আপন খেয়ালে পাখিও তোলে গান,
জোনাকির আলো জ্বলেজ্বলে নিভে যায়।


জানিস খোকা, তুমি আসবি বলে উড়কি ধানের মুড়কী ভাজি,
ভিন্নী ধানের চিড়ে কুটি,কুমড়ো ফুলের বড়া ভাজি
ভোরের শিশিরভেজা ঘাসের গালিচায় লুটিয়ে পড়া
শিউলি কুড়িয়ে ভরি ছেঁড়া আঁচল।


-মা মাগো,
-কে, কে ডাকে আমায়?
-আমি গো মা আমি, আমি তোমার খোকা
আমি এসেছি মা, তুমি দেখতে পাচ্ছ না ?
আমি এসেছি বলেই তো দূর্বাঘাসে হাসছে শিশির
রাতের বাতাসে শিউলির ঘ্রাণ
লালে লালে সেজেছে কৃষ্ণচুড়া শিমুল পলাশ
আমি এলেই তো, দুলে ওঠা ফুলের বুকে বসে ভ্রমর।
স্বপ্নলোকের আলোয় আলোকিত সন্ধ্যাতারা
কোকিল কণ্ঠে তোলে সুমধুর তান
পাকা ধান আর অম্রমুকুল গন্ধে ভরে ভুবন।


শহীদ মিনারের বেদিতল সাজে আল্পনায় তোমার শত সন্তান ফুলেফুলে সাজায় সে গৃহকোণ
বাহারি ফুলের রঙে গন্ধে মেঘাচ্ছন্ন শীতল হাওয়া ভর করেছে আমাদের প্রাণে
বসন্তের ঢেউয়ে স্বর্গ -মর্ত উন্মাতাল
কর্কট ক্রান্তি পেরিয়ে ক্রমেই ধাবিত হচ্ছে
তোমার পিছুটানে।


দুঃখিনী মা মুচকি হাসে
আকাশ থেকে আকাশে রাখে চোখ
তারপর আত্মচিৎকারে বলে ওঠে
তুই এলে সপ্রতিভ আঘাতও মনে হয় স্বর্গখনি
শিশির ধোয়া দূর্বার তুলতুলে গালিচা বিছানো
গ্রামের আঁকাবাঁকা পথটাকে মনে হয় স্রোতস্বিনীর কুলুধ্বনি।


একটি বসন্ত দিন, একটি কালবৈশাখী তাণ্ডব, একটি শ্রাবণ ঢল, এইটি হেমন্ত বেলা, একটি হীমশীত অপেক্ষা
কৃষ্ণচূড়ার নিপুণ ছায়ায় কখন ধ্বনিত হবে তোর পদধ্বনি?


২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০