প্রিয় স্বাধীনতা আমার,তুমি এসেছিলে এই বাংলার বুকে
লাখো শহীদের রক্তের স্রোতে ভেসে।
তুমি এসেছিলে উড়ে বিধবা মাতার উড়ালচণ্ডি আওলা চুলে,
তুমি এসেছিলে ধর্ষিতা বোনের আত্মচিৎকারে,
তুমি এসেছিলে বাবার উলাঙ্গ দেহ মাড়িয়ে।


প্রিয় স্বাধীনতা,
তুমি এসেছিলে দলে বেধে
যুবক, বৃদ্ধ, আবাল, বনিতার চাপচাপ রক্তের হলি খেলা খেলে।


সাদরে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল তোমায়
দূর্বঘাসে জমে থাকা মুক্তদানার মত শিশির কণা ।


প্রিয় স্বাধীনতা,
তুমি এসছিলে রক্তিম সূর্যের চোখে চোখ রেখে
লাগামহীন ঘোড়ায় চড়ে আমার সোনার বাংলায়।
তুমি এসেছিলে,
মায়ে, বোনের, ভায়ের কান্নারেখা আর সমস্ত গ্লানি মুছে
সোনালি আলোয় ঢেকে দিতে এক খন্ডভূমি  ।


কিন্তু তা আর হলো কই
আজও এখানে রাজপথ ভিজে ওঠে ভাইয়ের রক্তে
প্রকাশ্য দিবালকে চিলাগলির মধ্য থেকে ভেসে আসে
ধর্ষিতার আত্মচিৎকার।
মা হারায় তার নাড়ি ছেড়া ধন, বিধবা হয় বোন
ক্ষণে ক্ষণে বাবা বুক ফেটে বেরিয়ে আসে দীর্ঘস্বাস।


এখানে দুধের শিশু অবুঝ রাসেল
মৃত্যু প্রহরে পায় না একবিন্দু পানি
পিতার লাশ পড়ে থাকে অর্ধ-সিঁড়িতে।
তাঁর  দেহের গড়িয়েপড়া রক্ত মাড়িয়ে-
সিঁড়ি বেয়ে আমাকে যেতে হয় উপরে।


প্রিয় স্বাধীনতা কি লাভ হলো তোমাকে পেয়ে!
তুমি ফিরে যাও, চলে যাও নিরুদ্দেশে
আর আমাকে ফিরিয়ে দাও সেই সব  লাখশহীদের ত্যাগী প্রাণ,
ফিরিয়ে দাও  তোমাকে আনতে সেদিন যারা সম্ভ্রম দিয়েছিলো
সেই সব সম্ভ্রমহীন বোনের সেই সম্ভ্রম।
যারা তারা বিরাঙ্গনা গালিটা নিয়েই শুধু বেঁচে আছে
মুক্তি যুদ্ধারা তবু পেয়েছে সম্মান
অথচ,বিরাঙ্গনা......।
ফিরিয়ে দাও স্বাধীনতা, ফিরিয়ে দাও বিরাঙ্গনা বোনের সম্ভ্রম
মায়ের কোলে সোনার ছেলেদের ।


হে প্রিয় স্বাধীনতা, যদি নাই পার আমায় ফিরিয়ে দিতে
আমার পিতাকে, আমার মাতাকে, আমার ভাইকে, আমার বোনকে
সদ্য ফোটা গোলাপ কলিটি যদি নাই হয় প্রস্ফুটিত
তবে কি লাভ তোমাকে পেয়ে?


স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা, তুমি ফিরে এসো সেই হয়ে স্বাধীনতা
যেখানে থাকবে না মাফিয়া সাম্রাজ্যের হানাহানি, রাহাজানি,
ফিরে এসো সদ্য জন্ম নেওয়া নিষ্পাপ নবজাতক হয়ে,
ফিরে এসো কাননের প্রস্ফুটিত  ফুল হয়ে,
ফাগুনে কৃষ্ণচূড়া, পলাশের মঞ্জুরী হয়ে,
তুমি ফিরে এসো স্নিগ্ধ সকালের কোমল স্পর্শ হয়ে,
গোধূলি বেলার সোনালি আভা হয়ে ।


যেখানে  দীর্ঘশ্বাস থাকবে না,রক্ত থাকবে না,অশ্রু থাকবে না ,
থাকবে না অহিংস্যতা, হীনমন্যতা,।


কোন পাগলীকে না হয় পিতার নামহীন সন্তানের মা,
মমতাময়ী মা তার সাতরাজার ধন-মানিক’কে লিখবে চিঠি
"খোকা আমার,মন দিয়ে লেখা-পড়া করিস,
নিজের প্রতি খেয়াল রাখিস, আমি বেশ আছি "


কিশোরী মেয়েটিকে নিশ্চিন্তে দৃঢ়কণ্ঠে বলতে পারবে
" বাঁছা আমার তোর বাবা নিশ্চই ফিরবে "
স্কুল, কলেজ, কোচিং ফেরত মেয়েটি নির্দ্বিধায় বাবাকে বলতে পারবে
" বাবা, ওবাবা তুমি মিছে ভয় পেয়ো না, কোন দুশ্চিন্তা কোর না
এ যে আমার দেশ, আমার প্রিয় বাংলাদেশ।
প্রিয় স্বাধীনতা আমার,  তুমি ফিরে এসো সেই স্বাধীনতা হয়ে
একটি সুন্দর সোনালি সকালে যেদিন থাকবে না
আর কোন কিছু হারানো ভয়।
১৮ মার্চ