রক্তে আগুন জ্বলে
এস সুলতানা


বুকের ক্ষতটা আজ নতুন করে দগদগে হলো
বহুদিন যাওয়া হয় না আমার প্রিয় ভদ্রার পাড়ে
একদিন এমন  এক কাচা সোনা রোদ মেখে ভদ্রার বুকচিরে গিয়েছিলাম শিপসা,
শিপসা পেরিয়ে বঙ্গপসাগর
কত রাত বনবাদাড়ে সহ্যা পেতেছি ঠিক ঠাওর করে বলতে পারবো না।
আজ সোনালি সূর্যটা  কেন হাত ছানি দিচ্ছে ফেলে আসা দিনে?
রহিমা দাদির পাটের মত চুলগুলো কালবৈশাখীর মাতাল হাওয়া উড়িয়ে নিতে চাইছে।
দেশের জন্য যে সেদিন  দিয়েছিল সম্ভ্রম
কি মূল্যটাই না আজ ভোগ করছে সেই রহিমা দাদি।
ঘররে চালে খড় নেই, পরনে জোটে না কাপড়......
নড়বড়ে খুটি হেলান দিয়ে বসে আছে করিম চাচা
উদাস চাহনী, বুক ভরা দীর্ঘশ্বাস।
এমন একটি দেশের জন্যই কি সেদিন জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছিলাম!
কি লাভ রহিমা দাদি, করিম চাচা তোমাদের বেঁচে থেকে?
তোমরা মরে যাও, থেমে যাক ভোরের পাখির গান, আর না ফুটুক ফুল,
কোন প্রয়োজন নেই ওই রক্তিম সূর্যটাকে জাগার
ও ঘুমিয়ে থাক অনন্তকাল।


এ দেশে এখনো ভাইয়ের খুনে রঞ্জিত হয় রাজ পথ
মায়ের কান্না- আহাজারিতে ভারি হয়
আকাশ বাতাস
পিতার চোখের অপরাহ্নের দুর্বল আলোর চিহ্ন
ক্ষণে ক্ষণে মাংসাশীরা খামছে খুবলে খাচ্ছে বোনের নরম তুলতুলে দেহ।
আমার ধ্বমনিতে উথাল পাথাল রাক্ষুসে  নেশা
বঙ্গবন্ধু কি প্রয়োজন ছিল সাত মার্চের ঐতিহাসিক সেই ভাষণের?
ফিরিয়ে নাও, ফিরিয়ে নাও তুমি তোমার দরাজ কণ্ঠের স্লোগান।
আমার রক্তে আজ ভাঙ্গনের নেশা।
না,এদেশে একটি নারী থাকবে না অধর্ষিত
মায়ের কোলে তার কোন সন্তান আর রাখবে না মাথা
অবুঝ শিশুকে মায়ের স্নেহের আচলে মুখ লুকাতে দেওয়া হবে না আর কিছুতেল।
পিতার অধিকার নেই জায়নামাজের পাটিতে সবার।
রাখালের বাঁশিতে উঠবে না কোন সুর
ওই আকাশে পারবে না উড়তে শরৎ বিকেলে দুধ সাদা মেঘ।
পুকুরের জলে খেলবে না মাছেরা
এই বাংলায় যত তরুণ আছে আমি সব কটাকে ঘাড় মটকে উল্লাসীত হব।
বৃদ্ধগুলো ভেসে যাক বানের জলে
আজ আমার রক্তে আগুন জ্বলে প্রতিশোদের আগুন, ভাই হত্যার প্রতিশোধ, বোন ধর্ষনের প্রতিশোধ,  মায়ের অঙ্গের সাদা শাড়ির প্রতিশোধ, বাবার বিষন্ন চোখের প্রতিশোধ, বঙ্গবন্ধুর ওই তিলত্তোমা তর্জনীর স্তাব্দ করার প্রতিশোধ।


৩ এপ্রিল ২০১৮
সময় ভোর ৬.২৫