আজ স্বাধীনতা দিবস, ইস্কুলে আজ পতাকা তোলা হলো।
লজেন্স-বিস্কুট এসব দেওয়া হল , আর উচ্চারিত হল বন্দেমাতরম ধ্বনী।
হেড স্যার ভাষণ দিলেন,  হাততালিতে মুখরিত হল স্কুলবাড়ি।
কিন্তু, ক্লাস ফাইভের নিতাই স্বাধীনতার মানে বুঝলো না।
ফেরার পথে ধান ক্ষেতের কচি ধান গাছদের জিজ্ঞাসা করলো-
তোমরা কি জানো স্বাধীনতা মানে কি?
ধান গাছেরা মাথা দুলিয়ে বললো
এই যে আমরা হাওয়াতে মাথা দোলাচ্ছি, এটাই স্বাধীনতা।
দমকা হাওয়া এসে বললো, আমি যখন ইচ্ছা ধানের ক্ষেতে খেলে বেড়াই এইটা স্বাধীনতা।
হঠাত্‌ করে একপশলা বৃষ্টি এসে বললো এই দেখো একেই বলে স্বাধীনতা।
ছোট্ট ছেলেটিকে দেখে আকাশে উড়ে চলা মেঘেরা বললো, দেখো আমরা কেমন স্বাধীন ভাবে ভেসে চলেছি, এটাই আমাদের স্বাধীনতা।
উড়ে চলা সাদা বকের দল বললো -
আমরা স্বাধীন - আমরা স্বাধীন,
উড়ে বেড়াই সারাটা দিন।
বনের পাখি বললো, পরাধীনতার যন্ত্রনা তোমায় খাঁচার পাখিরা বলতে পারবে।
বৃষ্টির জলেরা মিলে মিশে নদীর বুকে খেলতে গেল;
নদী বললো দেখো নিতাই আমাকে দেখো, আমিই স্বাধীনতা।
যেমন ইচ্ছা তেমন চলি, এপাড় ভাঙি ওপার গড়ি।
আজ স্বাধীনতা দিবস,
ইস্কুলে হেড স্যারের কথা নিতাই-এর মনে পড়লো।
স্যার বলেছিল আমরা মনের কথা লিখতে পারতাম না।
দেশের নুন খেতে পারতাম না,
মায়ের দেওয়া মোটা কাপড় কেড়ে নিয়েছিল ওরা।
একসাথে জমায়েত হওয়াও নাকি বারণ ছিল।
কত বিপ্লবীরা নাকি জেল খেটেছিল।
নিতাই এখন বেশ মেলাতে পারছে।
সবুজ ধানের ক্ষেত, বৃষ্টির বিন্দু আর খোলা হাওয়া
নিতাইকে স্বাধীনতার মানে বুঝিয়ে দিল।
নিতাই ভাবতে ভাবতে বাড়ি চলে এলো।
বাড়িতে আজ গরম ভাত আর আলু সেদ্ধ,
নিতাই গরম ভাতের গন্ধেও স্বাধীনতা খুঁজে পেলো।
দূরে কোথাও মাইকে গান বাজছে -
মায়ের দেওয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নেরে ভাই...
দীন দুখিনি মা যে তোদের এর বেশি আর সাধ্যি নাই।