প্রথমবার ঘুমিয়ে ছিলাম মায়ের গান শুনতে শুনতে।
দ্বিতীয়বার ঘুমিয়ে ছিলাম আকাশ ভাঙার শব্দে।
তৃতীয়বার ঘুমিয়ে ছিলাম বৃষ্টির শব্দ শুনতে শুনতে।
চতুর্থবার ঘুমিয়ে ছিলাম দারুন ঝড়ের শব্দে।
তারপর আর ঘুম হয়নি, অবাক চোখে চেয়েছি শুধু।
আমায় জাগিয়ে ঘুমিয়ে গেছে বিষণ্ণ পৃথিবী।
চির নিদ্রায় শায়িত ভষ্মে আচ্ছন্ন নিথর দেহ তার।
ছুটে গেলাম জানালার দিকে। চেয়ে দেখতে,-
দেখলাম ঝলসানো চাঁদ, জ্যোৎস্নায় পুড়েছে চরাচর।
এক অদ্ভুত ভয়ানক রঙিন অন্ধকারে ছেয়ে আছে
ঘুমন্ত পৃথিবীর আনাচে কানাচে, কোষে কোষে।


মাথায় চোখে মুখে নিজের সারা শরীর হাতড়ে ফেললাম।
আমি বেঁচে আছি তো? নাকি....
দেয়ালে সাঁটানো ছয় ফুট লম্বা বেলজিয়াম কাচের আয়না।
সাদা কাপড়টা টেনে ফেললাম নীচে।
ততক্ষণে দু-চোখ আমার বন্ধ হয়ে গেছে।
প্রতিচ্ছবি হারানোর ভয় গ্রাস করেছে আমায়।
মুষ্ঠিবদ্ধ দুই হাত। কনুই দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা ঘাম পড়ছে ঝরে।
দৃষ্টি পড়লো নিজ নগ্ন শরীরে। অক্ষত আমি।
বুকের বাম দিকে শুধু অতি পরিচিত তার চেয়েও ভীষণ প্রিয়
নখের আঁচড়ের অতি উজ্জ্বল নিশান।
ডান হাত ছোঁয়ালাম নিজ বাম বক্ষে।
কেঁপে উঠল পায়ের তলার মাটি, আমার প্রতিচ্ছবি।
বেঁচে থাকার আনন্দে ও দুঃখে, ক্লান্তির পেয়ালায় চুমুক দিলাম।
চোখের পাতা ভারী হয়ে এল।
কত দিন বধির হয়েছি যেন। আর কতকাল যেন ঘুমাইনি আমি।