সজারুর আক্রমণে সাবেক রাজার পায়ে চোট,
কে হবে আজ বনের রাজা, বন জুড়ে তাই চলছে ভোট।
বাঁদর ভোঁদোড় বুনো বেড়াল হায়না চিতা হাতি,
রাজা হওয়ার অভিলাষে ফুলায় আপন ছাতি।
হৈ হৈ রব, বন তোলপাড় চারিদিক কোলাহলে,
রাজা রাজা আচরণে ভিড়ছে দলে দলে।
হুক্কা হুয়া বলে শেয়াল, বাগিয়ে দখিন থাবা,
বলল হেসে “আমি হলাম সব বাবাদের বাবা!
আমি ই হব বনের রাজা, বল কি বলিস কাকাতুয়া।”
এই না বলে মুখটি তুলে হুকা হুয়া হুকা হুয়া।
কাকাতুয়া ফুলিয়ে গলা মিনিট দশেক হেসে,
আপন মনের গোপন কথা বলল অবশেষে।
“শোন সব্বাই কান খুলে শোন ছোট্ট এ কথা খানি,
রাজ্য শাসন কারে বলে কেবল আমি ই জানি।
আমি হব বনের রাজা ইহাই উপদিষ্ট।”
বসেছিল বুনো বেড়াল, ভীষণ শান্তশিষ্ট,
দারুণ রেগে হঠাত্ করে বলল ভীষণ জোরে,
“চুপ কর বেটা বাঁকা মুখো, ধরবো নাকি তোরে?
আবোলতাবোল কী সব বলিস, মগজটি কি ফাঁকা?
রাজার রাজা দেখতে হলে আমার দিকে তাকা।
আমি হলাম বাঘের মামা সিংহের সত ভাই,
আমি ছাড়া রাজার যোগ্য জঙ্গলে কেউ নাই।”
“আরে দূর হ্যাট্, মাথা মোটা! বিড়াল হবে রাজা!
স্বপ্ন দেখা বন্ধ করে চুপচাপ বস,- যা যা!
আমাকে দেখ, আমাকে, অরে আমার দিকে দেখ,
চারটি হাতে লাফিয়ে বেড়াই, লাখে আমি এক।
রাজা হওয়া কি সবার কম্ম, সবার কি তা সাজে!”
এই না বলে হোঁতকা বাঁদর লাফায় সবার মাঝে।
বলল ইঁদুর, “আরে থাম তুই, আগে শোন মোর কথা,
দেখতে আমি ছোট্ট হলেও সিংহের প্রান দাতা।”
“কে রে এত ভাট বোকে যায়? কানটা দে তো মোলে!”
এই না বলে ঘিঞ্জি হাতি উঠলো হেলেদুলে।
সবাই ভয়ে জড়োসড়ো স্তব্ধ চরাচর,
বট গাছটা নাড়িয়ে দিয়ে দেখায় গায়ের জোর।
“গায়ের জোরেই রাজা হব, আমি মহা রাজা,
কে আমারে বাধা দেবে, আ- সামনে আ-যা!”
হঠাত্ কিসের শব্দে যেন উঠলো কেঁপে বন,
বজ্র সম চমক দিল প্রকাণ্ড গর্জন।
কেমন যেন মন্ত্র বলে বাতাস গেল থেমে,
থর থর থর কাঁপলো মাটি আকাশ এল নেমে!
দুইটি চোখের ঝলকানি তে লাগলো আগুন মেঘে,
ঘুমন্ত এক দানব যেন উঠলো ক্ষণে জেগে।
ছুটলো সবাই চতুর্দিকে পালাও পালাও বলে,
কেউ লাফিয়ে চড়লো গাছে কেউ ঝাঁপ দেয় জলে।
স্ব-গর্জনে উঁচিয়ে থাবা সিংহ এসেছে,
বুঝিয়ে দিল কেশর নেড়ে আসল রাজা কে!