ছিল একদিন জনবহুল,
কিন্তু টোকিওতে আজ কোন জন কলরোল নেই।
ঘুমিয়ে গেছে ব্যস্ততা, নিউ ইয়র্ক আজ নৈঃশব্দের গ্রাসে।
শূন্য প্যারিস, শূন্য তাজ মহল,
আজ কোন হৃদয়ে এরা প্রেমের অঙ্কুরণ করতে পারছেনা।
ভেঙ্কটেশ্বর কিংবা অক্ষরধামে, ভগবান অভিলাষী ভক্তের সমারোহ আজ নেই।
তোমাদের অগ্রগতির উজ্জ্বলতম, শ্রমমুখর সূর্য আজ অস্তাচলে। শিকড়সমেত উপড়ে পড়ছে তোমাদের গৌরবময় অগ্রগামী সভ্যতার সুঠাম বৃক্ষখানি।
হঠাৎই তোমাদের পারস্পরিক ভালোবাসা, ভ্রাতৃত্ববোধ মৃত্যুর পরোয়ানা হয়ে উঠছে।
এমনকি তোমাদের সমৃদ্ধ চিকিৎসা বিজ্ঞান, কঠোর সামরিক শক্তি, দূর্ভেদ্য সব প্রাচীর টপকে ঘরে ঘরে আজ মৃত্যুর অবাধ্য পদচারণ।
চারিদিকে শুধু ভয়, মৃত্যু ভয়।
তোমাদের অলংকৃত মন্দির, মসজিদ, গির্জা, শোকেসে রাখা দামী দ্রব্য সামগ্রী মাত্র। কোন প্রার্থনা আজ ফলপ্রসূ নয়।
তোমাদের আনন্দরঞ্জিত পৃথিবী আজ তোমাদেরই মৃত্যু তৈরীর কারখানা।


অথচ দেখো, ভ্যানিশের ক্যানাল আজ স্বচ্ছতার পুনর্জীবন ফিরে পাচ্ছে।
নিম্নগামী কার্বন নির্গমন। তোমাদের স্বার্থান্বেষী অগ্রগতির কলুষতা হতে বায়ুমন্ডল নিজেকে আরোগ্য করে তুলছে। আজ পাঞ্জাবে আবার উদিত হিমালয় শৃঙ্গ।    
তোমাদের অনুপস্থিতি আকাশকে করেছে নির্মল, প্রকৃতি হয়ে উঠছে নিষ্কলুষিত।
যেমনটা তোমরা পেয়েছিলে উপহার সৃষ্টিলগ্নে, পৃথিবীর জঠর হতে  সবুজের সেই ধ্বনি আবার ফিরে আসছে।
এই প্রাপ্তির দম্ভ, এই গৌরব একান্ত শুধু পৃথিবীর।
তোমাদের প্রশংসিত অগ্রগতির পচনে ক্ষয়িষ্ণু পৃথিবী নিজেকে আজ ব্যাধিমুক্ত করছে।
তোমাদের স্বার্থসিদ্ধির পাপাচার পৃথিবীর সম্পদের করেছে অবাধ লুন্ঠন।
বিতাড়িত করেছ তোমরা বৃক্ষকে বৃক্ষের সমাজ হতে। পশু, পাখি, কীটপতঙ্গ নিরীহ প্রতিটি জীব তোমদের উল্লাসে আহুত হয়েছে।


দেখ আজ তারা ফিরে এসেছে, বিজয়ীর মত উন্মুক্ত পা ফেলে, সুস্থির নিঃশ্বাসে তারা স্বভূমিতে ফিরে এসেছে।
কিন্তু তোমাদের অস্তিত্বের পতাকা আজ অধোগামী। প্রতিনিয়ত তোমাদের জীবিত চেতনায় আজ মৃত্যুর হুংকার। মানুষ তোমরা আজ, ক্ষুধা আর মৃত্যু, পরস্পরমুখী দুটি তীরে বিদ্ধ একটি প্রাণ।
যতটা দিয়েছে পৃথিবী, ততটা আজ নিচ্ছে ফিরিয়ে কড়ায় গণ্ডায়।
মানুষ, তোমারা কবে বোঝবে এই সত্য যে তোমরা পৃথিবীর বুকে শুধুমাত্র আশ্রিত।
পৃথিবীর এই ভূ-প্রকৃতি, জল, হাওয়ার উপর তোমাদের কোন অধিকারই নেই।