এই নিয়ে ৩৩ বার,
পাত্র পক্ষের অসম্মতি ছাড়া আর কিছু জোটেনি মীরার।
এই নিয়ে ৩৩ বার,
বিয়ের বাজারে মীরার প্রদর্শন হয়েছে। দ্বিতীয় বার কেউ ফিরে তাকায়নি।
কপালে জন্মের কালো দাগ, তার উপর নিম্ন মধ্যবিত্তের পিতৃহীন শ্যামবর্ণা মেয়ে। বয়স প্রায় ত্রিশ ছুঁইছুঁই। নেই কোন চাকরি।
বিয়ের কেনা বেচায় নিজেকে সর্বোত্তম পণ্য হিসাবে উপস্থাপিত করার কোন অলঙ্করণই নেই মীরার।
রোজ রোজ গঞ্জনা, চোখের সামনে তর তর করে বেড়ে উঠা ছোট দুটি বোন, রুগ্ন মা।
এই নিয়ে ৩৩ বার,
সমাজ মীরা আর জং ধরা পুরোনো আসবাসপত্রের মাঝে কোন তফাৎ রাখেনি।
এই নিয়ে ৩৩ বার,
মীরা বুঝেছে রূপ নয়তো টাকা মেয়েদের জন্য অক্সিজেনের মত। ৫ লক্ষ টাকা পণ দিতে পারলে সেও ডাক্তার বর পাবে।
ভাবতে ভাবতে মীরা হাতের চুড়ি গুলি খুলে টেবিলে রাখে। রাত প্রায় ১০টা।আজ পূর্ণিমা। জানালার ফাঁক গলে জোৎস্না ভেজা বাতাস সমস্ত ঘরটাকে ছুঁয়ে যাচ্ছে।
শাড়িখানা খুলে নি মীরা।এটা ওর পছন্দের।ঘুরেফিরে আয়নায় নিজেকে ভালো করে কয়েকবার দেখে নিল সে।
এই ৩৩ বারে, কেউ মায়া ভরা এই চোখ দুটো দেখেনি। দেখেনি পান পাতার মত লক্ষ্মীমন্ত মুখখানি। তার ফার্স্টক্লাস এম.এ, চরিত্র, কর্ম দক্ষতা, ব্যবহার, এই ৩৩ বারে কেউ দেখেনি।
চামড়াতেই আটকে গেছে সবার নজর, এই ৩৩ বারে কেউ তার মনের রং দেখেনি।
ডায়েরিটা নিয়ে বসলো মীরা। এক তলার নিজ ঘরে। অনেকদিন কিছু লেখা হয়নি। লেখাটা তার পুরোনো অভ্যেস। জানালায় সোমত্ত চাঁদ আর কোটি কোটি নক্ষত্র।
তারপর..
তারপর, সময়ের অনুশাসনে পরদিন আবার ভোর হল। সব কিছু আগের মতই ছিল, কিচ্ছু বদলায়নি।
শুধু পাড়াপড়শিরা এ্যাম্বুলেন্সের শব্দ শুনতে পেল। পুলিশ দড়ি কেটে নিয়েছে।
আজ সেই কতদিন পর, মা মীরার মুখখানি বুকে জড়িয়ে চুমু খাচ্ছে, কিছুতেই মীরাকে ছাড়তে চাইছেনা। জানিনা মীরা সেটা দেখতে পাচ্ছে কিনা।
মীরা অবশ্য নিজের মৃত্যুর জন্য কাউকেই দায়ী করেনি।