তুমি তোমার দুঃখগুলি গাছের ডালে ঝুলিয়ে দিলে ....
আজ সহসা স্মৃতির পাতায় ভেসে উঠলো তোমার ছবি;
ভেসে উঠলো দশটি বছর।


বছরগুলির একেক'টা দিন যুগের মতোই লাগতো আমার;
বিষাক্ত দিন ...


মনে পড়ে, তোমার সাথে দৃষ্টি-বদল প্রথম দিনেই
অসঙ্কোচে বলেছিলে -
তোমার সাথে ঘুরছে নিলাজ মেয়েটি কে?


সুমি তখন আমার থেকে আট বছরের কনিষ্ঠা আর
আমি তখন একুশ ছোঁয়া সুঠাম যুবক।


প্রথম দিনের প্রথম থেকেই তোমার মনে
সুমির প্রতি ভাব ছিলো না;
একটা কেমন হিংসে ছিলো।
আমিও ঠিক প্রসঙ্গটা এড়িয়ে যেতাম
আর তুমিও
হাজার কথা বলার ফাঁকে বলে উঠতে -
বললে না তো, ধেংড়ি মেয়ের সাথে তোমার কিসের পিরিত?


-কিসের পিরিত? আমিও ঠিক তৎক্ষণাতই বাঁধিয়ে দিতাম লঙ্কাকাণ্ড।


সুখ ছিলো না তোমার আমার;
সুখ ছিলো না মর্তলোকে।


আজ সহসা স্মৃতির পাতায় দশটি বছর,
আজ সহসা তোমার জন্য করুণা হয়;
কষ্ট লাগে।
ঝগড়াঝাঁটির দশটি বছর তোমার সাথেই কাটিয়েছিলাম ...


সুমি'র কিন্তু তোমার প্রতি কল্পনাতীত শ্রদ্ধা ছিলো।
ঘরে ঢুকেই বলতো তোমায় -
কাকি, তোমার ইচ্ছেটা কী, পাগলি হয়েই কাটিয়ে দেবে?
বলতো- এসো, তোমার মাথায় তেল মেখে দি',
ভ্যানিটি ব্যাগ খুলে বলতো- নীল টিপে যা মানাবে, আহ্!
তুমি খানিক ইতস্তত করতে করতে বলে উঠতে
- দেখো, এ সব ন্যাকামো আর আমার সাথে করবে না তো;
বলতে- এ সব আদিখ্যেতা আমার কিন্তু ভাল্লাগে না।


সুমি তখন বাগান-প্রিয়।
ওর বাগানে মুক্ত আকাশ;
মুক্ত বাতাস বইতো মৃ্দুমন্দ বেগে;
মাটির ওপর সবুজ-সবুজ,
শাখায় আধো ফুটন্ত ফুল;
আমি তো সে বাগান দেখেই বিমুগ্ধতায়
গন্ধ পেতাম আলিঙ্গনের;
দুচোখ ভ'রে দেখে যেতাম বিস্মিত ফুল।


সুমি আমায় নামে ডেকেই তৃপ্তি পেতো।
ওকে আমি আমার ঘরে ঢুকতে বারণ করতে চাইনি;
সে বিষম অসাধ্য ছিলো;
এ সব তুমি মর্মে মর্মে জেনেছিলে,
বুঝেছিলে- কোথায় আমার অক্ষমতা;
সে সব কিছু অভিমানে
তুমি তোমার দুঃখগুলি গাছের ডালে ঝুলিয়ে দিলে......


আজকে সুমির বাগান যেন এলিয়ে পড়ে ফুলের ভারে!
অখণ্ড সেই বাগান জুড়ে একটা ভ্রমর ফুল-বাসরে ...


তুমি আমার দোষ নিও না।