আমার এখন বয়স সবে
পনেরো কি ষোলো,
সেইদিনই তো হাইরোডটায়
এক্সিডেন্টটা হলো !
সন্ধ্যেবেলায় পড়তে যাব,  
এমন সময়, গাড়িটা আমায় মারলে এক ধাক্কা,
ছিটকে পড়লাম রাস্তার ওপর
কাছেই ছিল সামনের মোড়ের বাঁকটা !
এখন আমি হাসপাতালের,
বেডে শুয়ে লিখছি !
চমক দিয়েও মাকে দেখিয়ে,
কাঁদার বদলে হাসছি !
সতেরোটা স্টিচ পড়েছে কপালে,
হচ্ছে অসহ্য যন্ত্রণা !
মুখের যে এই ক্ষতের দাগ,
তা মনে হয় আর মিটবে না !


মা, ফোনটা যে খালি বেজেই যাচ্ছে,
শুনতে কি তুমি পাচ্ছো না?
বাবা হয়ত, চিন্তা করছে,
শান্তি যে সেও পাচ্ছে না !
ফোন ধরেছো? কি বলছে বাবা?
আমায় কেন বলছ না?
বাবাকে বলো হয়নি বিশেষ কিছুই,
হয়েছে সামান্য দুর্ঘটনা !


ফোনটা রেখে এসো না মা,
একটু বসো আমার কাছে !
শোনাবে গো সেই গল্পগুলো,
যেমনটি শোনাতে প্রতিরাতে !
রাত কটা হলো গো মা?
ঘড়িতে কটা বাজলো ?
ন' টার আগে বাড়ি ফিরে যেও,
দিদি হয়তো এইমাত্র বাড়ি ফিরল !


আমার দিদির বিয়ে যে সামনে,
শুভক্ষণ কাছে আসছে !
নিজের কথা ভাবার আগেই
হয়তো আমার কথাই সে এখন ভাবছে !


বাবা আবার কাল পুরোহিত ডাকল,
কি ভাবছ? তা কি কিছুই জানি না আমি?
" হোম যজ্ঞে তে কিছুই হবে না "
বললেই বলবে " হ্যাঁ, তুই তো অন্তর্যামী !
কিসে কি হয় আর কিসে কি হয় না,
সব তো জেনে বসে আছিস !
আর আমাদের যে কত চিন্তা
একবারও সে খবর কি তুই রাখিস? "


রাত হয়েছে অনেক এখন
মা গিয়েছে বাড়ি !
দিদি হয়তো রিমোট হাতে একাই আছে বসে,
আর হচ্ছে না কাড়াকাড়ি !
ঝগড়া লড়াই শেষ হবে কাল থেকে,
শেষ হবে বোনে-বোনে খুঁনসুটি !
আমায় করিস ক্ষমা দিদি,
যদি করে থাকি কোনো ভুল ত্রুটি !
দিদি, তুই পড়ে থাকলি একাই শেষে,
পড়ে রইল ঘর-দোর, জীবন-সংসার !
এক রাজকন্যে হারালো জীবন,
দিচ্ছে পাড়ি যমের দুয়ার !


লিখন-শক্তি হারাচ্ছি এবার,
দিলাম বিদায়, সবাই থেকো ভালো !
অন্ধকার ঘুচুক রাতে
আর জ্বলুক গৃহে আলো !