*************
মা, তুমি কেমন আছো ?
মাগো - তুমি ভালো আছো ?

কতকাল কতদিন আমি তোমাকে দেখি না মা
তোমার মনে আছে মা – একবার চৈত্র মাসের চড়ক মেলায়
মাটির একটা ঘোড়া হাতে আমি দাঁড়িয়েছিলাম তোমার কাছেই
তারপর হঠাৎ লাঠি-মিঠাইওয়ালার ডাক শুনে
আমি পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলাম – তারপর হারিয়েই গেলাম

মাটির ঘোড়া হাতে মেলায় ঘুরে ঘুরে আমি কেঁদে কেঁদে
মা’  মা’ ডেকে তোমায় খুঁজে যাচ্ছি – মেলার ভিড়ে
মানুষের ধাক্কায় কতবার পড়ে গেলাম – আবার ঊঠে দাঁড়িয়ে
তোমাকে খুঁজে চলেছি --- তুমিও সারা মেলা তোলপাড়
                                  করে আমায় খুঁজছো ।

হঠাৎ দূর থেকে আলুথালু পাগলিনীর মত তোমাকে ছুটে আসতে
দেখে আমি দৌড়ে গেলাম তোমার দিকে – এক্কেবারে তোমার কোলে
তোমাকে খুঁজে পেয়ে তখন আমার মনে হচ্ছিল আমি
যেন কোন স্বর্গ খুঁজে পেলাম – আহ কি শান্তি –কী শান্তি
আমি কি আর তখন স্বর্গ বুঝি – তবু কেনো যে মনে হোল

তুমিও আমায় বুকের ভেতর চেপে ধরে সারা মাথায় মুখে
গায়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছো আর আমি সেই অমিয় মমতার
আবেশে বুঁদ হয়ে মুখ গুঁজে আছি তোমার বুকে –
এখন আমি জানি মা তোমার ওই কোলই আমার স্বর্গ চিরকালের
আমার বুকের ভেতর সেই স্বর্গ আমি ধরে রেখেছি আশৈশব ।
বাবা বলেছিল, তুমি তারাদের দেশে তারা হয়ে আছ –
আমি তাই প্রতি রাতে কত শতবার যে জানলা খুলে
আকাশে তোমাকে খুঁজেছি মা – তুমি কি আমায়
                             একবারটিও দেখো নি মা ?

মা, তুমি এখন কি করছ ওখানে – অতদূরের আকাশে ?
আমার জন্যে রাতভোরে উঠে ভাপা পিঠে কি এখনো কর তুমি?
আর আমায় দিতে পারছোনা বলে কেঁদে কেঁদে একটিও
নিজের মুখে না দিয়ে সব খিড়কি দিয়ে পুকুরে ফেলে দাও মা ?
আচ্ছা মা – ওখানে কি পুকুর আছে – ?
স্কুল ছুটির দুপুরে বিনুদের বড়পুকুরে দাপাদাপি করে
কতবার জ্বর বাধিয়েছি আর সারারাত বসে তুমি আমার
মাথায় দিয়ে চলেছ জলপট্টি -আমার শিয়রে তোমার
সেই উদ্বিগ্ন মুখটি আজো আমার মনে খুব জেগে আছে মা ,
এখন আমার অসুখ হলে মনে মনে আমি
তোমায় আমার মাথার কাছে নিয়ে আসি-আর ভাবি
তুমি ঠিক সেই ছোট্টবেলার মতই আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছ

মেলায় দুদণ্ডের জন্যে ছেলেকে হারিয়ে সেই আমার উন্মাদ পাগলিনী
হয়ে যাওয়া তুমি কি করে এত্তোকাল আমায় ছেড়ে আছো  মা -?

মা, তুমি কেমন আছো ?
মাগো - তুমি ভালো আছো ?
তোমায় ছেড়ে আমি একটুও ভালো নেই মা – কি করে থাকি বল !!