ধোপদূরস্ত পোশাক পরিচ্ছদে সেজেগুঁজে
সকলেই সার বেঁধে বসে আছি
পাখিদের মতো পার্কের বেঞ্চিতে
কেউবা চাদর বিছিয়ে ঘাসে
কেউবা আধশোয়া হয়ে চোখ বুজে
টেনে নিচ্ছে রৌদ্রের অমল সুবাস
পরম আয়েশে ।
সারা উদ্যান জুড়েই আনন্দ আয়োজন
একপাশে মঞ্চে কেউ গেয়ে যাচ্ছে
আলখাল্লা বুড়োর গান ভুলসুরে
শিল্পীর নামটিও জানি না
কানে বড্ড বেসুরো বাজছে
কপিরাইট শেষ হয়ে গেছে তাই যে কেউ
এখন বুড়োর আলখাল্লা ধরে
বেসুমার টানাটানি করছে
অনেক সময় যা কানে চোখেও সইছে না !
একটু পরেই হাতে চলে এলো
নান্দনিক পাতার প্লেটে
মুক্তোর দানার মতো পান্তা ভাত
সাথে মৌ মৌ সুগন্ধ গরম গরম
ইলিশ ভাজা ও বেগুন ভাজা
আহ- কী মহার্ঘ আয়োজন,
জনপ্রতি দু’হাজার টাকায় এমন সুন্দর ব্যবস্থা
ধন্যবাদ জানাতেই হয় উদ্যোক্তাদের
এই না হলে চলে
বছরে একদিনই তো নববর্ষের আয়োজন !
হঠাৎ চোখ চলে গেলো পার্কের ঘেরার বাইরে
নিরাপত্তা প্রহরীরা চিৎকার করে তাড়াচ্ছে
একদল উদোম শরীরের কঙ্কালসার শিশুকে
কী আকুল ক্ষুধা নিয়ে ওরা তাকিয়ে রয়েছে
আমাদের দিকে
আমাদের হাতের প্লেটে সেঁটে রয়েছে
ওদের ক্ষুধার্ত চোখ
আমার সারাটা শরীর যেন শিরশির করে উঠলো
এক অনপনেয় পাপবোধে ছেয়ে গেল মন
একী নির্লজ্জ অপরাধ আমরা করে চলেছি
উষার এই পবিত্র আলোয়
একদল না খেতে পাওয়া শিশুদের সামনে
কোন লজ্জায় মুখে তুলছি
এই হাজার টাকার বিলাস খাদ্য
ধীরে ধীরে উঠে আমার প্লেটটা সবচাইতে
ছোট্ট শিশুটিকে হাতে দিয়ে নিঃশব্দে বেরিয়ে এলাম
নববর্ষের এই লজ্জাস্কর আয়োজন থেকে;
জানি, এই অতি সামান্য এক প্লেট খাবার
ওই শিশুটির বা সারা দেশ জুড়ে ক্ষুধার তাড়নায়
না ঘুমাতে পারা লক্ষ শিশুর ক্ষুধা মেটাবে না
শুধু ভাবি, ওরাতো আমাদেরও সন্তান হতে পারতো ।
আমরা কেনো ওদের ক্ষুধা নিবৃত্তির
জন্যে কিছু করতে পারছি না
রাস্তা দিয়ে ছুটে চলেছে বহুমূল্য গাড়ীর বহর
চারিদিকে এতো বিলাসবহুল অট্টালিকা আকাশ ছুঁয়েছে
অথচ মাটির কাছে এই নিস্পাপ শিশুদের
দুমুঠো খাবারের আয়োজনই আমরা করতে পারি না
বা করতে চাইই না !
সেই থেকে কোনদিন আমি আর
পান্তা ইলিশের কথা মুখেও আনিনা;
এক ক্ষমাহীন পাপের বিষ আমাকে আজো
খুঁড়ে খুঁড়ে খায়, খুঁড়ে খুঁড়ে খায়
কেনো তাও জানি না ।।
~~~~~<।।> ~~~~~
দ্রঃ
শুভ নববর্ষ – ১৪২১
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আসরের সকল কবিবন্ধু ও তাঁদের
পরিবার পরিজন সবাইকেই শুভ নববর্ষের
আন্তরিক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা জানাচ্ছি,
সকলের জীবন হোক আনন্দময় ও সমৃদ্ধিময় ।।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~