--------------
আমি সেই অলৌকিক মেয়ে
তোমরা এর মধ্যে নিশ্চয়ই আমার কথা জেনে গেছো
কি মজা তোমাদের তাই না !
সারা বিশ্বের আনাচে কানাচে কি হলো না হলো তা
একনিমেষে তোমাদেরই মতো কিছু লোক
রসিয়ে রসিয়ে গল্প বানায় আর টেলিভিশনের পর্দায়
ছবি সহ নিয়ে রমরমা হাজির করে দেয় ।
রক্তাক্ত লাশের ছবি, ধর্ষিতা কোন মেয়ের ছবি
কোনটা হয়তো তোমাদের জন্যে খুশির খবর, কোনটা বা দুঃখের,
ওই লাশটি যদি তুমি হতে !
ওই ধর্ষিতা মেয়েটি যদি তোমারই মেয়ে  হতো !
তোমাদের দুঃখবোধও আছে নাকি? কি জানি !

আমার মায়ের কী দোষ ছিলো বলো?
বেচারী আমাকে শরীরের অতলে লুকিয়ে প্রাণ বাঁচাতে
অভূক্ত ক্লান্ত লুকিয়েছিল মাটির গহবরে একটি ঘরে
সেইখানেও বেচারীকে নিজের প্রাণটা বাঁচাতে দিলো না
রকেট বোমার একটি বুলেট ।
আমার মায়ের লাশ চিরে আমাকে
তোমাদের পৃথিবীর আলো দেখানো হলো –
আহ কী সুন্দর তোমাদের পৃথিবী !

কিন্তু এমন সুন্দর পৃথিবীর নীল আকাশ জুড়ে তোমরা
কামানের গোলায়, মিশাইলের আগুনে ভরে রেখেছো
যেখানে নক্ষত্র থাকে, যেখানে শাদা মেঘ উড়ে বেড়ায় স্বপ্নের মতো
অমন স্বপ্নীলতা বারুদের ঘ্রাণে তোমরা রেখেছো আকীর্ণ করে
তোমাদের নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয় না !!
আমিতো নিঃশ্বাস নিতে না পেরে হাঁসফাঁস করছিলাম
তবু তোমাদের এই যুদ্ধসঙ্কুল পৃথিবীতে
আমি তিনদিনের বেশী আর বাঁচতে পারলাম না !
তোমরা বাঁচো কি করে !

আমি হামাস চিনি না, পিএলও চিনি না
আমি ইসরাইল চিনি না, গাযাও চিনি না  
আমি শুধু জানি তোমরা চাইলে সবাই মিলে এই
পৃথিবীটা জুড়ে এক অনুপম স্বর্গ  রচনা করতে পারো,
সকল বারুদের ধোঁয়া, আগুন মুছে দিয়ে
শান্তির, সৌহার্দ্যের, মধুর ভালোবাসার এক অনন্য স্বর্গ !
তোমরা স্বর্গের স্বপ্ন দেখতে ভালোবাস
নরকে থাকতেই কিন্তু তোমাদের বেশী ভালো লাগে ?

তোমরাই নাম দিয়েছো আমার অলৌকিক মেয়ে
যে শিশুটিকে মৃত মায়ের শরীর চিরে এনেছো
তার জন্যে কী আয়োজন তোমাদের ছিলো?
না সবুজ, না ফুল, না ঘর, না আকাশ
না একটি নরোম কোল, না কোন আশ্বাস
কী আছে তোমাদের ? কেন থাকবো আমি এখানে ?
আমি আমার সেই অসহায়া মায়ের কাছেই চলে গেলাম !

[ সেই অলৌকিক মেয়েটি মারা গেছে দু'দিন আগে- ইসরাইলের বোমা হামলায় নিহত হতভাগ্য মেয়েটির মায়ের লাশ চিরে মেয়েটিকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন যুদ্ধবিধ্বস্ত গাযার কিছু সাহসী ডাক্তার - অভিমানী মেয়ে থাকে নি আমাদের সাথে; এই কবিতাটি সেই আলৌকিক মেয়েটিকেই দিলাম]
                 ----০----