আকুতি
স্বপঞ্জয় চৌধুরী
ওরা বাঁচতে চায়
পৃথিবীর আলো বাতাস গায়ে মেখে
শিকারির গুলিতে আহত হরিণীর মায়াবী চোখ
জানায় বেঁচে থাকার আকুতি।
তার চোখে ভাসে বিপন্ন বণ
গোলপাতার ভেতর লুকিয়ে থাকা
গিরগিটির মুখ।


বাঁচতে চায় কৃষাণী মোমেনের বউ
কাচা ধানের গন্ধ শুকে শুকে
সেও ক্ষেতের আল ধরে
হেটে যেতে চায় দূরে
আর কটা দিন যদি বাঁচা যেত
তবে পাকা ধানের গোছা
মুঠে পুরে নিয়ে মাপা যেত
জীবনের নিশ্বাস,
অবলা গাভীর বিয়ানটা
হয়ে যেত ততদিনে।


বাঁচতে চায় কুয়োর ব্যাঙ
আবারো বৃষ্টি এলে
কচুপাতার নিচে
নিজেকে লুকোবে
সাপের মুখে ছটফট করছে
তার ফেলে আসা কুয়ো
রাত্রির নিঝুমতা আর
ঝি ঝি পোকার শব্দ।


বাঁচতে চায় যুদ্ধমাইনে
যে শিশুটির পা উড়ে গেছে
যে তার বাবার কাঁধে চেপে
ভুট্টা ক্ষেতের ভেতর দিয়ে
কাকতাড়ুয়া দেখে দেখে
ছড়া কাটতো।
ওইখানে ওই ধ্বংসস্তুপের নিচে
তার প্রিয় খেলনাটি চাপা পড়ে আছে।
তার মায়ের স্কার্ফ দিয়ে মোড়ানো
তার বিধ্বস্ত পা।
তার নিথর চোখ দেখে খোলা আকাশ
বাবার কান্নারত মুখ।


এ পৃথিবী মায়াময়
সবাই বাঁচতে চায়।
আমি বাঁচতে চাই
তোমার নিশ্বাস আমার
কাঁধে ফেলে ফেলে
তুমি বাঁচতে চাও
আমার হাত ধরে
দিগন্ত ছোবে বলে।