আমরা বাঙালি।আমরা বাংলায় কথা বলি,বাংলায় লিখি।আমাদের রক্তে রাঙানো বাংলাভাষা আমরা সবাই ভালোবাসি।
-তো ?
-মানে,ভালোবাসি বললেই তো হয় না ।যাকে ভালোবাসি তাকে তো আগে জানতে হয় ।জানতে গেলে প্রথমেই জানতে হবে বাংলা ভাষার ইতিহাস।
-ইতিহাস? সে তো পাঠ্যপুস্তকে ছিল।কবেই পড়েছি।
- সবাই পড়েছে।তবু আরেকবার ধুলো ঝেড়ে নিলে ক্ষতি কি?
-ঠি- ক আছে।শুরু করুন।তবে বেশি জ্ঞান ফলাবেন না।ইতিহাসের সাল- তামামি দিয়ে মাথাটা খারাপ করবেন না।
-বেশ।শুরু করি: প্রায় ৫ হাজার বছর আগে,মধ্য এশিয়ার পশ্চিম এবং ইউরোপীয় মধ্যভাগ থেকে দক্ষিণ- পূর্বাংশ পর্যন্ত ভূখন্ডে...
-থামুন,থামুন।প্রথমেই মাথাটা ধরিয়ে দিলেন।
-আচ্ছা,আচ্ছা।প্রায় ৫ হাজার বছর আগে এশিয়া ও ইউরোপের অধিকাংশ ভূখন্ডে যে জাতি বাস করত, তারা মোটামুটি একই ভাষায় কথা বলত।এদের ভাষার নাম ইন্দো- ইউরোপীয় মূল ভাষা। এই মূলভাষাটি দুই ভাগে বিভক্ত: কেন্তম ও শতম।এদের মধ্যে শতম শাখাভুক্ত ভাষাভাষীদের যে গোষ্ঠী দক্ষিণ- পূর্ব এশিয়ার দিকে চলে আসে,তাদের বলা হয় আর্য।আর্য ভাষার আবার তিনটি স্তর: ইরানীয়,দরদীয় এবং ভারতীয়।আর্যদের যে গোষ্ঠী খাইবার গিরিপথ দিয়ে ভারতে
চলে আসে,তাদের ভাষার নাম ভারতীয় আর্যভাষা।এই ভাষায় তৈরী হয় বেদ।তাই একে বৈদিক ভাষাও বলা হয়।
- ইন্টারেস্টিং ।তারপর?
-সপ্তম শতকে পাণিনি এই বৈদিক ভাষার কিছু সংস্কার করেন এবং একে শিক্ষিত জনের ভাষা করে গড়ে তোলেন এবং নাম দেন সংস্কৃত ভাষা। সংস্কৃত ভাষাতে রচিত হয় রামায়ণ, মহাভারত।
- সংস্কার থেকে সংস্কৃত ?
- ঠিক তাই। কিন্তু সংস্কৃত ভাষা ছিল গুরুগম্ভীর,ব্যাকরণে আবদ্ধ ,আর জনসাধারণের জন্য ছিল উচ্চারণে অসুবিধা।তাই সংস্কৃতে কিছু পরিবর্তন এনে বাঁধা নিয়মে আবার কিছু শিথিলতা আনা হল।এই ভাষাকে বলা হয় পালি ভাষা।পালিভাষায় রচিত হয় বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ ত্রিপিটক।পালি ভাষা আরও পরিবর্তিত হয়ে ক্রমশ:জনসাধারণের ব্যবহার উপযোগী হতে থাকে।এর সাথে অনার্যদের ভাষা মিশ্রনের ফলে সৃষ্টি হয় প্রাকৃত ভাষা।
- বাংলা বলুন,বাংলা ! একের পর এক ভাষা তো তৈরী হয়েই যাচ্ছে।বাংলা কোথায়?
- এসে গেছি। এই যে প্রাকৃত ভাষা,এটা আসলে ছিল সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের কথ্যভাষা।আর ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলে ছিল বিভিন্ন প্রাকৃত ভাষা।বহু প্রাকৃতের মধ্যে একটির নাম ছিল মাগধী প্রাকৃত।যা কিনা মূলত: বিহার অঞ্চলের ভাষা ছিল।মাগধী প্রাকৃতের পূর্বাঞ্চলীয় রূপ থেকেই জন্ম নিল বাংলা ভাষা।
- সত্যি,অবাক হতে হয়।সেই বাংলা ভাষা আজ বিশ্বের ৬৯০৯ টি ভাষার মধ্যে পঞ্চম!
বিশ্বের ২৭ কোটি লোক বাংলায় কথা বলছেন।
- একদম ঠিক।ভাষার জন্যে আজ একটা গোটা দেশ। তিনটি রাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা একজন বাঙালি ।
- এ বাঙালির গর্ব।
-শুধু দেখলে হবে? খরচা আছে।
- মানে ?
-বাংলাভাষার প্রতি দায়িত্ব,কর্তব্যের কথাও স্মরণে রাখতে হবে তো। বাংলা ভাষাকে আরো সমৃদ্ধ করতে কবি,সাহিত্যিকদের সর্বাগ্রে এগিয়ে আসতে হবে।আর তার জন্যে জানতে হবে তার শব্দ,বানান রীতি ইত্যাদি।
- বুঝেছি।এখুনি আবার শুরু হবে।
- না, না।সে সব অন্যদিন।
- একটা কথা বলব?
- বলুন।
- আপনি যে ইন্টারনেট থেকে খুঁটে সব বেমালুম ঝেড়েছেন,আমি বুঝে গেছি।আগের লেখাটাও.....
- চা খাবেন ?