(মাহবুব উদ্দিন চৌধুরী শ্রদ্ধাস্পদেষু)


ভোর হতেই আজ কেনো জানি পড়ছে বড্ড মনে তোমায়
দু’বছর আগে যে গেলে চলে সবারে ছেড়ে দূর অজানায়।


আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার হে ৩০ নাম্বার আসামী!
পরাজিত শত্রুদের দণ্ডিতে গর্জেনি কেনো তব রণ-বীণ?
৭১’এর রণাঙ্গনের হে বিজয়ী বীর!
কোন অভিমানে ছিলে তুমি পর্দার আড়ালে অন্তরীণ?


ইচ্ছে ছিলো বড্ড আমার লিখবো লোমহর্ষক ঘটনা তোমার
অথচ হয়নি কিছুই লেখা তব অভিজ্ঞতা আর ইতিহাস বাংলার
ছাত্রত্ব, চাকরি আর অবশেষে বিদেশে পাচারের ফলে
স্বপ্ন আমার ভেস্তে গেলো যে ওসব অজুহাতের ছলে
হঠাৎ শুনি মোটর নামের যন্ত্রদানব নিয়েছে তোমায় কেড়ে
দূর প্রবাসে আত্মা আমার উঠে কেঁপে চোখের জলে ভরে।


সাবেক সহকর্মী বন্ধু’র স্মৃতিই আজ কেবল আমার সম্বল
স্বাধীনতা সংগ্রামে ছিলো তোমার কী সাহস-মনোবল!
ছোট্ট তাদের ঘরের মেঝের গর্তে ছিলো তোমাদের যুদ্ধাস্ত্র
যার উপর মাদুর পেতে পাহারায় ঘুমাতেন তার মা নিয়ত।
আর শত্রু সৈন্যের উপর হানতে চাইলে আঘাত
পড়তো তাদের দুয়ারে তোমাদের মৃদু করাঘাত
ন’মাস ছুটেছো যুদ্ধের মাঠে আনতে এক মুক্ত স্বাধীন দেশ
প্রসিদ্ধ পরিবারের সন্তান হয়েও নিয়েছো আজারীর বেশ।


রাষ্ট্র-স্বীকৃত আসল–নকল  মুক্তিযোদ্ধার ভিড়ে
তরী তব দেখিনি কভু ভিড়াতে তাদের তীরে।
দেখিনি কভু বিজয়ী বীর তোমার হাসিমাখা মুখ
কার অবজ্ঞায় ছিলে তুমি স্বীকৃতি থেকে বিমুখ?


মুক্তিযুদ্ধ বাণিজ্য জমে উঠেছে ঢের এখন করতে নেতাগিরি
মানুষের মুক্তির বদলে হয়েছে আজ তা ক্ষমতারোহণের সিঁড়ি।  
অথচ তুমি গিয়েছো চলে, না করে সরব প্রতিবাদ
আছে যারা বেঁচে, তাঁরাও কি পাচ্ছে কম অপবাদ?


স্বাধীনতা এখন ব্যক্তিপূজা আর দুই পরিবারের কাড়াকাড়ি
জনতার দাবী উঠলেই হয় তা ‘যত্তসব বাড়াবাড়ি’!
আমরা তাই ভয়েই কাটাই দিন, পথ চলি সদা চোখ বুজে
চাটুকার-দাম্ভিকেরাই আজ নেয় স্বাধীনতার সব পাওনা বুঝে।


প্রার্থনা আমাদের সুখে থাকো তুমি পরপারে স্রষ্টার মমতায়
তোমার দানের বদলা দেন যেন আল্লাহ্‌ অপার করুণায়!


[০৬/০১/২