তুমি মানুষ হও
সাইয়িদ রফিকুল হক
(আর্মি-অফিসারের স্ত্রী আয়েশা লতিফ কর্তৃক
কিশোরী-গৃহকর্মী সাবিনাকে নির্যাতনের প্রতিবাদে।)


তোমার মুখের অনিন্দ্য সুন্দর কারুকাজ
তাম্রযুগের শৈল্পিক নিদর্শনকেও হার মানাবে,
সেখানে দেখতে পাচ্ছি খুব আভিজাত্যের ভাব!
তোমার চেহারাটি খুব পরিপাটি করে সাজানো,
আর মুখে খুব কমনীয় হাসি!
পোশাকের চাকচিক্যে আর জৌলুসে
ঢেকে গেছে রাধাকৃষ্ণের বৃন্দাবন।
তোমার চেহারা যে দেখে সেই মুগ্ধ হয়,
সেগুন-কাঠের আসবাবের চেয়ে মসৃণভাবে
পরিপাটি করে বার্নিশ করা হয়েছে তোমার সমগ্র দেহ,
আর দেশী-বিদেশী দামি-দামি প্রসাধনসামগ্রীতে
ঢেকে গেছে তোমার চেহারার সাধারণ দিকটি।
তোমাকে কে বলবে আজ অসুন্দর?
তোমার গায়ের গন্ধে আজ নির্ঘাত পরাজিত হবে
প্রকৃতির সুগন্ধি জুঁইফুল!
আর সুগন্ধি গোলাপগুলো তোমাকে দেখে
হয়তো আর পৃথিবীর বুকে কখনও ফুটতে চাইবে না!
তবুও দেখি তোমার দীনতা, আর খুব দীনতা,
বাইরে শুধু তোমার দেহখানি ঝকঝকে-তকতকে সাজানো,
কিন্তু তোমার অন্তঃকরণ পৃথিবীর যাবতীয় দুর্গন্ধে পরিপূর্ণ!
তোমার বাড়িতে আশ্রিতা এক কিশোরীর গায়ে
তুমি ঢেলে দিয়েছো গরম তেল!
আর তার পিঠে দিয়েছো গরম খুন্তির ছ্যাঁকা!
কিংবা হাসতে-হাসতে তার গায়ে ঢেলেছো
ফুটন্ত গরমপানির সমুদ্র!
তার সামান্য কাজের ভুলে তুমি একটা রমণী
একমুহূর্তে হয়ে গেছো দাজ্জাল-সম্রাজ্ঞী!
তোমাদের মতো সুন্দরমুখের নারীপিশাচিনী-রমণীরা
আজ পৃথিবীর বুকে তৈরি করছো জাহান্নাম!
নিত্যনতুন সাজে তোমরা আজকাল অত্যাচারে দগ্ধ করছো
তোমাদের সেবায় নিয়োজিত অসহায় সাধারণ মানুষগুলোকে,
আবার স্বামী-সন্তানের ভোগেও তাকে দিয়েছো ভেট!
কাজের মানুষ বলে তাকে আজ করছো সীমাহীন অবহেলা
কিংবা তাকে এখনও তোমরা মানুষ ভাবতে পারোনি।
আমি বলছি: তুমি মানুষ নও—তুমি চিরকালীন পশু,
তবুও চেষ্টা কর মানুষ হতে—আর তুমি একটু মানুষ হও।



সাইয়িদ রফিকুল হক
মিরপুর, ঢাকা, বাংলাদেশ।
১০/০৭/২০১৭