অন্যের বাবা কে আপনি যত সোহাগ করেই বাবা ডাকুন না কেন, সেটা যেমন আপনার পিতিৃপরিচয় হিসাবে দেয়া সম্ভবনা, তেমনি অন্যের সংস্কৃতি আপনি যতই হুবুহু নকল করুননা কেন সেটি আপনার জাতিসত্তার পরিচয় হতে পারে না।আমাদের বাংলাদেশের এখন অন্যের বাবা কে সোহাগ করে বাবা ডাকার মতো অবস্থা।


বর্তমানে কোন দেশের সংস্কৃতিকে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরে সে দেশে্র স্যাটেলাইট চ্যানেল গুলো। ইন্ডিয়া,পশ্চিমবঙ্গ,তামিল,সৌদিআরব,পাকিস্থান ইত্যাদি যে কোন দেশ বা অঞ্চলের চ্যানেলে ২ মিনিট চোখ রাখলেই আমরা তাদের ভাষা ও পোশাক দেখে বুঝে যাই আমরা কোথাকার চ্যানেলে দেখছি।অজানা দেশের সংস্কৃতি সম্পরকে ধারনা হয়ে যায় ওই দেশের চ্যানেল দেখে।কিন্তু আমাদের দেশের চ্যানেল দেখে হঠাৎ করে কেউ বুঝতে পারবে না সে কোন দেশের চ্যানেলে দেখছে,এটা না ভারত না আমেরিকা আর বাংলাদেশের ছোঁয়া তো নেই বললেই চলে। বাঙ্গালি চেহারার উপস্থাপক/উপস্থাপিকার না ইন্ডিয়ান না ইউরপিয়ান এমন এক কিম্ভুতকিমাকার সাজ। বসার অশ্লিল ভঙ্গিমা। ভূল ইংরেজি আর ভূল বাংলার মিশ্রনে যা বোঝাতে চায় তাও বোঝাতে পারে না ঠিক করে। খুব  সাভাবিক ভাবেই তার প্রভাব পড়েছে বাস্তব জীবনে আর বিশেষ কিশোর ও তরুণদের মধ্যে।এরা সবাই বাংলা ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ইত্যাদি থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে সাংস্কৃতিকভাবে এক ধরনের শঙ্কর গোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে।শুদ্ধ বাংলায় কথা বলার লোকের, বিশেষত নতুন প্রজন্মের ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা বিপজ্জনকভাবে কমে এসেছে।


আজ প্রেমিকা কে বলার জন্য প্রেমিক সুইট, কিউট এই দুইটা শব্দ ছাড়া আর কোন ঊপমা খুজে পায় না। অথচ বাংলা শব্দ ভান্ডারে রয়েছে সুষ্মিতা, সুনয়না এর মত হাজারও মন ভূলানো উপমা।


ভাষা বিজ্ঞানিদের মতে মানুষ কথা বলার সময় তখনি নিজের ভাষার মধ্যে অন্য ভাষার শব্দ আনে যখন-
১। ঐ মুহুরতে নিজ ভাষায় তার কথাটি প্রকাশের জন্য উপযুক্ত উপযুক্ত খুঁজে পায় না ২। নিজ ভাষার শব্দ ভান্ডারে উপযুক্ত শব্দে্র ঘারতি থাকে ৩। যখন নিজ ভাষা সে পরিমান অভিজাত্য পূর্ন হয় না।


কিন্তু বাংলার মতো সমৃদ্ধ ভাষার ক্ষেত্রে এসব যুক্তি খা্টে না।আমাদের আছে গর্ব করার মতো ভাষা ও সংস্কৃতিক ঐতিহ্য। ইংরেজি সাম্রাজ্যবাদী রাজভাষা, যা বাঙালির কাছে অভিজাত্যের প্রতীক।কিন্তু বাংলার ইতিহাস ও শক্তির শেকড় অনেক গভীরে প্রোথিত।বাংলা ভাষার ধ্বনি ও উচচারণ রীতির উৎস সংস্কৃতি ভাষা থাকে আসায় তা ইংরেজি ধ্বনি ও উচচারণ রীতির থেকেও বেশি সমৃদ্ধ।


এখনতো বান্দি (বাংলা+হিন্দি) না হলে বলায় ভাব আসে না। আমরা কি জানি সেই ভাসায় তেমন কোন সাহিত্য নেই, এটা শুধু কথ্য ভাষা,সাহিত্য সৃষ্টির উপযোগী কোন ভাষা না।আমরা হিন্দি গান গুলোর বাংলা করলে দেখতে পাবো খুব সস্তা অর্থ।শুধু অশ্লিল নাচ আর বাজনার তালে মানুষকে ভূলিয়ে রাখে।এর আলাদা কোন ব্যাকারণ নেই, উর্দু ভাষার ব্যাকারণ আর হিন্দি ভাষার ব্যাকারণ একই। পশ্চাত্য সংস্কৃতির অন্ধ অনুকরণে আমরা শুধু অশ্লিলতা আর অসভ্যতার দিকেই ঝুকছি।


আজ আমাদের মানস্মমত সাহিত্যের অভাব।ভাষার অবস্থা এখন এমন দাঁড়িয়েছে যা সৃষ্টিশীল সাহিত্য সৃষ্টির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক।তরুণরা বই পড়ে না, শিশুরা গল্প শোনে না।এখন শিশুদের বিনোদন ডোরেমন আর গেমস। বড়দের হিন্দি সিরিয়াল,আর পড়লেও পড়ের মধ্য পড়ে ফ্রিতে পাওয়া ফেসবুকের সস্তা গল্প কবিতা।


যে ভাষার স্বপ্নে আর অহংকারে আমরা আমাদের মগজ আর জমিনকে স্বাধীন করেছিলাম, সে ভাষার সর্বত্র আজ বিকৃতির অনপনেয় কালিমা।বাংলাকে শুধু রাষ্ট্রভাষা নয়, শিক্ষা-সংস্কৃতির মাধ্যম করাও ছিল ভাষা আন্দোলনের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য। উচ্চতর শিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার ব্যবহার না হওয়াটাও আমাদের ব্যর্থতা, লজ্জা জনকও বটে। আজ বাংলা ভাষা যখন বাঙালির চোখে মুখে ঝুলিয়ে রাখে উপনিবেশিক বাবাদের থেকে পাওয়া হীনমন্যতার, ‘অপর’ হয়ে ওঠার তিক্ত সাধ, তখন তাকে তথাকথিত আধুনিকতার মোড়কে বন্দি করতে হয় নিজেকে। আর সে আয়োজন সারতে তাকে যেতে হয় ভাষা মিশ্রণের কাছে। এই প্রাপ্ত অবস্থা ‘পূর্ব পাকিস্তানের’ নয়, স্বাধীন বাংলাদেশের!বিশ্বের জাতিসমূহের মাতৃভাষার অধিকাররক্ষার আন্দোলনে আদর্শিক নেতৃত্বে থেকেও গৃহাভ্যন্তরে বাংলার এখন নাজুক অবস্থা।এসব দেখে লজ্জায় ঘৃণায় নতমুখ হতে হতে একবিন্দু হয়ে যায় আমাদের শহীদ মিনার ।