বৃদ্ধ শিশুটি বন্দী করে রেখেছি ফ্রেমের ভেতর!
ফ্রেমটি সযত্নে টানিয়ে রেখেছি দেয়ালের মাঝ বরাবর
ড্রয়িং রুমের পাশে!
এখনও রাত্রি হলে, হঠাৎ আঁৎকে উঠি-
হাতড়ে ফিরি সারাটি বিছানা জুড়ে...
কোথায় সে বৃদ্ধ শিশু? আমার জন্মদাতা পিতা___
চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করে...
আমি কাঁদতে পারিনা____
স্বপ্নাবিষ্টের মত ছুটে যাই উঠোনের ধারে...
তাঁর মাটির বিছানার কাছে____
যেখানে সে ঘুমিয়ে আছে পরম নিশ্চিন্তে...
চারিদিকে ছেয়ে আছে সবুজ দুর্বা ঘাস,
অশ্রুবিন্দুর মতো____
ঘাসেদের বুক জুড়ে বিন্দু বিন্দু শিশিরের জল!
হঠাৎ মনে হয়, বয়সের ভারে নুয়ে পড়া বট বৃক্ষের মতো
এক জীর্ন কলেবর এগিয়ে আসছে আমার দিকে
তাঁর ক্ষীন পদক্ষেপে!
উঠোন ভরা চাঁদের আলোয়-
গা শির-শির করা মৃদুমন্দ বাতাস আর হালকা কুয়াশায়
আমি শুনতে পাই তার পদশব্দ___
আর জরাজীর্ন লাঠির ঠকঠক আওয়াজ!
হয়তো সে কাছে এসে দাঁড়ায় ছায়া সঙ্গীর বেশে...
আর অপলক চেয়ে থাকে আমার দিকে____
কী অদ্ভূত মায়াময় করুণ সে চাহনি!
হঠাৎ ঘুম ভাঙ্গে...
আমার দু’গন্ড বেয়ে অঝোরে ঝরতে থাকে অশ্রুবিন্দুগুলো...
যখন ভাবি, এইতো ক’দিন আগেও যে বৃদ্ধ শিশুটি
গভীর রাতে চুপিসারে এসে টেনে দিয়ে যেতো
আমার শীতের কাঁথা...
পরম আদরে হাত বুলাতো আমার কপাল জুড়ে...
যাঁর হাতের আঙুল ধরে-
আমি প্রথম হাঁটতে শিখেছিলাম এই পৃথিবীর পথে___
যার নরম বুকে পরম নিশ্চিন্তে শুয়ে
কাটিয়ে দিয়েছি কত সহস্রাধিক রাত_____
সে আজ আর নেই!
তখন আমার বুকের ভেতর পাঁজর ভাঙ্গার কষ্ট লাগে...
প্রেতাত্মার মতো ছুটে যাই তাঁর বাঁধানো ফ্রেমের কাছে___
লক্ষ-কোটি স্মৃতির ভেলা চোখের তারায় ভাসে...
তবুও আমার দিকে অপলক চোখে
চেয়ে থাকে তাঁর মুখচ্ছবি_____
সে আমার সদ্যমৃত জন্মদাতা পিতা!
মৃত্যুর পরও কী সকরুণ তাঁর চোখ...
যাকে আমি বন্দী করে রেখেছি আমার ভালোবাসার ফ্রেমে!
সে-ও আমায় বন্দী করে রেখেছে পরম মমতা দিয়ে...
সকল বাঁধন ছিন্ন করার পর!
কোন এক অদৃশ্য বন্ধনে অশ্রুবিন্দুর মতো___
রহস্যের দ্বারপ্রান্ত ঘেঁষে...
এই মায়া!