(তিনি বেঁচে আছেন তাঁর কবিতায়, তার কর্মে )


চলে যাবো
========
চলে যাবো একদিন, তোমার চোখের জলে ভেসে!
দূরের ওই গাংচিল ডেকে নেবে দূর থেকে,
একলা শ্মশান তলে এসে!
না হয় দাড়াবো গিয়ে-সূর্যের কোনো পিছে,
নামহীন পাহাড়ের কোলে, তোমার চোখের জল-
শুকালে আঁচলে মিশে-
আমাকে যেও না শেষে ভুলে।
এমনি চৈত্র দিনে, কোনো এক ঝাউ বনে
দেখবে আসবো চুপে-কিশলয় হয়ে,
ওরি মাঝে খুঁজে পাবে, আমারে চাহিয়া দেখ -
কোন এক রোদ্দুর গাঁয়ে।
না হয় যমুনা কূলে-ফেলে আসা দিন ভুলে
মাছরাঙা দের দলে রব, সুদূরের মালাবার
একা রবে বালু গায়, রাখালিয়া সুরে ভেসে যাব!
শরতের কাশবনে - সাদা বক দেখো যদি
চুপি চুপি যেও তার দ্বারে!
শুধাইও শুধু তারে - কোথায় রয়েছি আমি
ফিরতি পথের কোনো দূরে ?
হিমেল বাতাস এসে - ভোররাতে যদি মিশে
শীত হয়ে ছুঁয়ে দেব গা, কিংবা ভোরের বেলা
কাক যদি করে খেলা - তোমারই উঠানের চালে।
ডাকিয়া শুধাতে পার - দেখেছো কি কোনো শিশু
স্তন মুখে শুয়ে মার কোলে!
দেখে নিও প্রতি রাতে - সাইবেরিয়ার পথে
চমরি-গাইয়ের পিছে যাব, আকাশের তারা হয়ে
চাঁদের কাছেতে গিয়ে, দুজনেই কিছু কথা কব!
ঘুম ঘুম চোখ কোনে- রাত ভেঙে পড়ে মনে
তোমার নয়ন জলে আমি,
মিশরের মমি হয়ে - সারাদিন রব চেয়ে
নাইজেরিয়াও পাবে তুমি॥


আমার কবিতা
=======
জানতে চাইছো আমার কবিতা-
কাদের সঙ্গে থাকে ?
জেনে রাখো তুমি আমার কবিতা-
জীবনের ছবি আঁকে ।
আমার কবিতা আদিমতা ভরা-
সভ্য সমাজে এসে ,
কথা কয় দেখো আমার কবিতা-
শান্ত শব্দে বসে ।
আমার কবিতা সাগরের তীরে-
পাহাড়ের কোলে রয় ,
আমার কবিতা মানুষে মানুষে-
মেলানোর কথা কয় ।
আমার কবিতা সাঁঝতারা হয়ে-
শিশুদের পাশে আসে ,
রাত শেষ হলে ভাঙ্গা মন নিয়ে-
পুবাকাশে যায় ভেসে !
আমার কবিতা ছন্দেতে নয়-
হৃদয় দিয়ে গাঁথা ,
কাহিনী হয়ে বেঁচে থাকে তাই-
আপন কাব্য পাতা ।
আমার কবিতা মসজিদে যায়-
মন্দিরে গিয়ে বসে ,
গির্জায় যায় শ্রদ্ধার সাথে-
সকল ধর্মে মিশে ।
আমার কবিতা ভোরের আলোয়-
খেলে সমাজের কোলে ,
আমার কবিতা মানবিকতায়-
অহিংসার কথা বলে ।
চড়াই-শালিক কথা বলে দেখ-
আমার কবিতা বলে ,
আমার কবিতা নত হয় শুধু
মায়ের চরণ তলে ।
আমার কবিতা রাত জেগে রয়-
নতুন বউয়ের হাতে ,
আমার কবিতা পুতুল খেলে-
বিকেলে শিশুর সাথে ।
আমার কবিতা শিশুকাল শেষে-
যৌবন কালে এসে ,
ভাসে-ভাষায় জীবন সবার-
শান্ত রাত্রে মিশে !
আমার কবিতা কবিতার দলে-
নত -মস্তকে কয় ,
নির্ভীক সে আত্ম-নির্ভর-
তাই সতন্ত্র হয়ে রয় ।
আমার কবিতা শালীনতা ভরে-
চলে পৃথিবীর পথে ,
হাতে হাত রেখে দাঁড়াতে চায়-
সুখে-দুখে এক সাথে ।
আমার কবিতা চালাঘরে থাক-
পৃথিবীর প্রতি ঘরে ,
শান্তির দূত হয়ে থাক শুধু-
অনন্তকাল ধরে ।
তোমার কবিতা
========
তোমার লেখায় বেঁচে রবো চিরদিন
তোমার ছন্দে হৃদয়ে জাগায় সুর -
তোমার কবিতা আমরাই কথা লেখা
দু’জনার আজ ব্যবধান বহুদূর!
তোমার কাব্যে জীবনের জয় গান
তোমার রচনা অনাবিল সুখ আঁকে,
তোমার সৃষ্টি তোমার হৃদয় বাণী
গোপন কথায় কবিতারা ছুঁয়ে থাকে।
আমি অনন্ত আদিম নবীন প্রেম
আমি প্রকাশিত তোমার মুক্তছন্দে -
অনাবিল সুখে আমি ভূমি জল বায়ু
যুগে যুগে আছি আচেনায় ভালমন্দে!
এসো ছায়া তলে কিংবা রোদের গায়,
আজও আমি তোমারই চেনা লোক!
আমার জন্য লিখেছো হাজার কাব্য -
জীবনে মরণে কবিতায় কথা হোক।
অক্ষরে জাগি চিহ্নে চরণ চুমি!
রচনায় থাকি অনন্তভাবে বসে,
তোমার লেখার প্রতিটি গল্প গায়
সুখ সুবাসে নিখিলের মাঝে ভেসে।
যে সুবাস খানি উতলা করতো হিয়া
যার পরশে শরীর জাগত নিজে,
সেই চেনা সুরে অচিনের গ্রহ তারা
প্রকাশিত হতো আকাশ জুড়ে সাঁঝে।
যুগে যুগে রবো কাব্যের মাঝে বেঁচে
নদী নালা বয়ে না হয় মরুর প্রান্তে!
আমি অক্ষর আমিই ছন্দরূপ
প্রকাশিত সুখ তোমার কাব্য গ্রন্থে!



(কবি তপন সৎপথী এখন স্বর্গবাসী)