কেমন আছো মা?
জানি,তুমি খুব ভালো আছো।
কারণ, ওখানে সবাই সুখী!
কেন জানিনা,
আজ তোমাকে খুব লিখতে ইচ্ছে হল,
যদিও এ পত্র তোমার কাছে কখনো পৌছবে না,
তবুও তোমাকে লিখছি।
এ পত্রের প্রতিটি অক্ষর ভাসিয়ে দেব বাতাসে,
তুমি এর গন্ধ নিও মা।


আমি ভালো আছি !
খুউব ভালো আছি।
জানো মা-আমার এখন অফুরন্ত সময়-
কাটতেই চায় না।
তাই মাঝে মাঝেই
আমাকে লেখা তোমার চিঠি গুলো পড়ি।
এখানে আসার সময়
ওগুলো এনেছি সযত্নে।
তখন ঐ ফালতু চিঠি পড়িনি ব্যস্ততায়
এখন পড়ি, বারবার পড়ি-
আর অশ্রু জলে ভেজায় তোমার পত্র।


তোমার মনে পড়ে মা-
তুমি একবার লিখেছিলে
"আমার ময়না কেমন আছে?
কেমন আছে আমার সাধের এলসেশিয়ান?"
ওরা আছে ওদের জায়গায়
আর আমি –তোমার জায়গায়।


জানো মা-
এখানে সবাই তোমার কথা বলে
শেষবার-যেবার তুমি অসুখে পড়েছিলে
জ্বরের মধ্যে নাকি অকাতরে ডেকেছিলে-
"খোকা- আয় বাবা,
একবার আয়-একটি বারের তরে আয়,
তোর মা যে আর…"


মা গো-
তোমার আকুতি, তোমার আর্তিতে-
আমার উচ্চাভিলাষী মন ভেজেনি।
স্ত্রী-পুত্রকে নিয়ে তখন আমার কত স্বপ্ন...!
তখন তুমিই ছিলে আমার
অত্যাধুনিক জীবনের উন্নতির একমাত্র অন্তরায়।
তাই তো তোমাকে এখানে রেখে গিয়েছিলাম-
রেখে গিয়েছিলাম আমার বোঝা!
একবারও দেখতে আসিনি কখনো।


মা গো, মা আমার
আমিও যে আজ সেই বোঝা!
এখন আমার জীবনের মূল্য-
ঐ এলশেসিয়ানেরও নগণ্য!
তাই আমার দেখানো পথেই হেটেছে
আমার একমাত্র পুত্র।


ঈশ্বরের অশেষ কৃপা-
আমি তোমার ঘরটাই পেয়েছি মা।
জনকপুরী বৃদ্ধাশ্রমের এই ঘরটা
ছোট হলেও অফুরন্ত আলো।
এখানে আমি বিশুদ্ধ বাতাস পাই-
পাই তোমার রেখে যাওয়া স্মৃতি…


মা মাগো
আমার কোন দুঃখ নেই মা।
অন্ধকার নিশুতি রাতে যখন ঝি ঝি ডাকে-
চোখ বন্ধ করে যখন শুয়ে পড়ি-
তোমার পরশ পাই।
আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দাও তুমি।
তোমার স্নেহ, তোমার মমতা, তোমার ভালোবাসা
আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে এখনো।
আমি তো তোমার দুঃখী মাইয়ের সুখী সন্তান।


মাগো,মা-
তুমি ভালো থেকো
আমার পুত্রকে যেন কোন অভিশাপ দিও না মা-
আমি তো তোমার মতোই অকে সুখী দেখতে চাই।
অর কোন দোষ নেই মা-
ওতো আমার রাস্তায়,
আমার দেখানো পথেই হাটছে, মা।
তুমি অকে ক্ষমা কোরো মা।



রচনা কালঃ ১০/০৯/২০১৫