হাসপাতালে ছুটি দিলো, কতদিন যে কেটে গেলো-
এবার আমি ফিরবো নিজের বাড়ি,
আপন সবাই নিতে এলো, চোখ মুখ চুল এলোমেলো-
নিয়ে এলো ফুলসাজানো গাড়ি ,


বললাম আমি ওরে খোকা, তুই এখনো বড্ড বোকা !
এত্তবড়ো গাড়ির কি দরকার ?
ডাকনা একটা ওলা উবের, পিছন সিটে জড়িয়ে তোদের-
পৌঁছে যাবো বাড়ীর সদরদ্বার ,


আমার কথা কত ই ভাবে, গরমে বাবার কষ্ট হবে -
তাই এনেছে ঠান্ডা কাঁচের গাড়ি,
ওরা কতো শ্রদ্ধা করে, তাইতো এমন আদর করে -
ধূপ জ্বালিয়ে যাচ্ছে নিয়ে বাড়ি ,


মূল দরোজায় থামলো গাড়ি, পৌঁছে গেলাম নিজের বাড়ি,
এবার আমি ঢুকবো আমার ঘরে-
কতোই স্মৃতি ভাসছে মনে, ছড়িয়ে ঘরের ইঁটে -কোনে,
নিজের চাদর বিছানা বালিশ জুড়ে ,


এর পরেতে সবাই মিলে, চাগিয়ে আমায় শুইয়ে দিলে
রোদের মাঝে উঠোনের উপরে
বললাম আমি খোকা ওরে- এইখানে আর থাকবো না রে
চলনা নিয়ে আমায় আমার ঘরে -


আমার কথা শুনছে না কেউ, কাঁদছে সবাই ভেউ ভেউ ভেউ
কেউবা দূরে কেউবা বসে কাছে -
আরে তোদের হলোটা কি ? বেড়াতে কেউ যায়না নাকি?
ফিরলে ঘরে এমন কাঁদতে আছে ?


খোকার মা তো চাপড়ে মাথা, বকছে কিসব যাতা কথা-
বলছে খালি - কোথায় গেলে তুমি !
বলছি আমি এই দেখোনা, একটুখানি চোখ খোলোনা,
এইতো তোমার সামনে হাজির আমি ,


তখনই আমি তেড়েমেড়ে , হাসপাতালের শয‍্যা ছেড়ে
উঠে নিজেই গেলাম নিজের ঘরে,
কতদিন যে শুইনি খাটে - ভেবেই নিয়ে লেপ সপাটে
শুয়ে গেলাম পা মাথা সব মুড়ে ,


আমি শুয়ে আমার ঘরে, আমার ছায়া উঠোন জুড়ে
আমার থেকে ছায়াই দেখি দামী,
সবাই আছে ছায়ায় মেতে, কান্না কাটি র আদিখ্যেতে
একা একা আমার ঘরে আমি ,


সবাই কেমন পাল্টে গেলো ? ছায়াখানাই আপন হলো ?
এতোখানিই অদরকারী আমি ?
ওরে খুকি ওরে খোকা- আমার দিকে একটু তাকা,
ও বড়োবৌ , আমি যে তোমার স্বামী !


কিছু পরে সবাই মিলে, ছায়াটাকেই কাঁধে তুলে
নিয়ে গেল কানা নদীর চর,
এতো একটা শ্মশান দেখি, ছায়াটাকে পোড়াবি নাকি ?
পোড়াসনারে, একটু দয়া কর ।


কি ক্ষতি করেছে ছায়া? নেইকো তোদের দয়া মায়া ?
পুড়িয়ে কেন করবি চির শেষ ?
ছায়া ছাড়া তোদের বাবা, কেমন করে বাঁচবে বাবা ?
পুড়লে ছায়া, কায়া যে নিঃশ্বেস,


আমায় ওরা চায়না যে আর, দায় নেই তাই কথা শোনার
আমার ছায়া পুড়েই হলো লীন,
আজো আমি বেঁচে আছি, ভালোমন্দে মিশে আছি
সামনেই তোদের এইতো কায়াহীন ।।