*** অজগর ***


---- তন্ময় দে বিশ্বাস -----


হুগলি জেলার ডানকুনিতে ডলি পিসির বাড়ি
হঠাৎ কি তার রোগ হয়েছে, পাক দিচ্ছে নাড়ি,
বিছানাতে শুতে গেলেই ঘুরছে শুধু মাথা
মনের মধ্যে দিচ্ছে উঁকি ছেলেবেলার কথা,
লাগছে না মন রান্নাবাড়ায়, খাবে সবাই কি ?
বুড়ো বয়েসে একি ব‍্যমো, ভাবলে লাগে ছিঃ,
ঠাকুর পূজো, ঘর গুছোনো, সব ই গেছে চুলোয়
কেচে রাখা জামাকাপড় লুটোচ্ছে সব ধুলোয়,
টিভিতে আর মন বসেনা, চিন্তা মাথায় সেই
সব ই আছে তবু যেন কিচ্ছু কোথাও নেই,
এসব রোগের চিকিৎসা কি ? বলবে সবাই যাতা
তবে কি কেউ খাইয়ে দিলো ব্রাম্ভী শাকের পাতা ?
ব্রাম্ভী শাকের পাতায় নাকি স্মরণ শক্তি বাড়ে !
এসব ধকল সামলানো কি সাধ‍্য বুড়ো হাড়ে ?
তাইতো পিসি ঠিক করেছে, যা হচ্ছে তা বেশ-
যেতেই হবে একবার সেই ছোট্ট বেলার দেশ ।


পড়ছে মনে একটা দিঘি টলটলে তার জল
দখিন পাড়ে ফলের বাগান কতোরকম ফল
কাঁচামিঠে হিমসাগর আর ল‍্যাঙড়া ফজলী আম
ফলসা লিচু আনারস আর জামরুল কালোজাম,
পূর্ব দিকের পাড়ে ছিল বাগান ভরা ফুল
মালতী জুঁই টগর জবা শিউলি আর বকুল,
সন্ধ‍্যবেলা ফুলের গন্ধে মাতাতো মন প্রাণ
আজও যেন নাকে আসে সেই সে ফুলের ঘ্রাণ,
উত্তর পাড় নারকেল আর তাল গাছেতে ঘেরা
বলতো সবাই পিসির বাগান সব বাগানের সেরা,
সানবাঁধানো ঘাটে ছিল পুতুল খেলার ঘর
খেলনাবাটি বাসনকোসন পুতুল কনে বর,
রাজা পুতুলের সাথে হতো কনে পুতুলের বিয়ে
সারাটা দিন কাটতো পিসির সেসব কাজ ই নিয়ে,
দিনের শেষে মায়ের কোলে ঘুমিয়ে যেতো পিসি-
চাঁদামামা আসতো নিয়ে চড়কা বুড়ি বাঁশি ।


ভোরবেলাতেই সকাল সকাল ভেঙে যেত ঘুম
ছুটতো পিসি আমবাগানে আম কুড়োবার ধুম
ঘরের মাঝে ফলের ঝুড়ি থাকতো ফলে ঠাসা-
পিয়ারাগাছে ছিল একটা ঝোঁটন বুলবুলির বাসা,
সকাল বেলা মা বুলবুলি খুঁজতে যেতো দানা
ক্ষিদে পেলেই কিচিরমিচির ডাকতো তাদের ছানা,
একদিন সেই আওয়াজ শুনে একটা কালো সাপ
ফেললো গিলে বাচ্ছাগুলো, তারপর চুপচাপ -
পালিয়ে গেল, ভেঙে দিলো পাখির বাসাখানা
খুঁজলো কতো বুলবুলিটা, পেলোনা তার ছানা,
সেসব কথা সকল পিসির পড়ছে মনে বেশ
সয়না দেরি যেতেই হবে ছোট্টো বেলার দেশ ।


একদিন তাই সকাল সকাল চড়ে রেলের গাড়ি
খুশি মনে পিসি যে তাই চললো দেশের বাড়ি,
দুপুর বেলা পৌঁছে গেল পিসি পিসির গ্রাম
দূরত্ব টা এক ই আছে মিলছে সব নামধাম,
মসজিদ টা বাঁয়ে ফেলে ডাইনৈ শিবের থান
অশথতলার মোড় পেরোলেই পিসিদের বাগান,
কিন্তু কোথায় বাগান, দিঘি, খেলনা খেলামদাড়ি ?
সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে বিরাট বিরাট বাড়ি !
ছিল কতো চাষের জমি সবুজ চারিধার
সবকিছু আজ উধাও, শুধু কংক্রিটের পাহাড় !
কোথায় গেল ফলের বাগান পুতুল খেলার ঘর ?
এক নিমেষে ফেললো গিলে কোন সে অজগর ?
কোনোদিন ও মিলবে না আর সেই সে মনের ছবি ?
হারিয়ে গেল মনের ভেতর মনিকোঠার চাবি !
পিসির তখন চোখ ভরা জল, প্রাণ ভরা আকুতি
এমনি করেই মিলিয়ে যাবে ছেলেবেলার স্মৃতি ?


উদাস চোখে, কঠিন চোয়াল, ফিরলো পিসি ঘরে
সেরে গেল পিসির সে রোগ চিরকালের তরে,
এমন কতোই অজগর আজ দিচ্ছে গ্রামে হানা
কি বিষেতে মরবে তারা আছে কারোর জানা ?
অজগর দের মারতে পারে, কাউকে যদি জানো
পিসির কাছে খবর দিতে ভুলোনা কক্ষনো,
অনেক পিসি একটা হয়ে ধরবে যখন লাঠি
অজগর রা মরবে তখন, বাঁচবে দেশের মাটি ।।