আহসান হাবীব, প্রখ্যাত কবি ও সাংবাদিক। তাঁর লেখা অনেক কবিতা শৈশবের গাঁথা রত্ন, সেরকম একটি রত্ন তাঁর লেখা "একটি মানুষ", উল্লেখযোগ্য এই কবিতাটি নিয়ে কিছু কথার অবতারণা আজকে।  


'একটি মানুষ' একটি ছন্দবদ্ধ কবিতা, প্রতিটি  স্তবক (Stanza ) একেকটি quatrain  বা চারটি লাইনের বিন্যাস। ১৪ টি quartrain এর সংযোগে এই কবিতাটির বিন্যাস। কবিতাটির বৈশিষ্ট্য এর ক্রমশ খুঁজে পাওয়া , pacing এর প্রশ্নটি। কাউকে চেনা চেনা লাগছে, লাগতেই পারে, কাউকে খুঁজে নেয়া যেতে পারে, তা তো পারা যায়ই , আর সবশেষে যা থাকে, তা হলো, খুঁজে ফেরা খুঁজে পাওয়া নামকে।


ছোটবেলায় পড়া এই  কবিতাটি রিমিঝিমিয়ে বৃষ্টি নামলে যে অনুভূতি আসে, বা শিল পড়লে জানালার কাঁচে, যে ছোট ছোট ক্ষনের বা মুহূর্তের সুষমার তৈরী হয়, তার একটা ভীষণ সুন্দর দোলার মতন।


আমার কবিতা সম্পর্কে ধারণা যেটুকু আছে, তার বেশির ভাগই নিজের চেষ্টায় মনগড়া ধারণা, কখনো সত্যি, কখনো আরো চেষ্টা করে যাওয়া ইচ্ছের নামান্তর। কখনো ছোটবেলার এই ছবিতে প্রশ্ন জাগেনা, বাসটি থেকে লোকটি নামলেন কেন, বা কেনই বা তিনি এতো ধীরে ধীরে প্রকাশমান হলেন?


ছোটবেলার বই পুস্তক গুলো অনেক সুন্দর, অনিবার্য সত্যের মত, পাতার রঙে খেলতে থাকা রোদের আলোর মতন , অথবা ছোট জলস্রোতের ধারার মতন।  যা আটকে থাকা জলের সবদিকে কোথাও সত্য রাখে, সত্যে স্থান দেয়।


একটি মানুষ
---- আহসান হাবীব


বাস থেকে নামলেন
খানিকটা থামলেন
তারপর থেমে থেমে
চললেন তিনি।


দেখে দেখে ভাবলাম
যেন ওঁর জানি নাম
মনে হলো আমি এই
লোকটিরে চিনি।


চেনা চেনা মনে হয়
তবু যেন চেনা নয়
ভেবে ভেবে কিছু মনে
পড়ছে না আর...


মাঝপথে দাঁড়ালেন
বা হাতটা বাড়ালেন
দু'চোখের কাছাকাছি
তার পরে তার--


ঘড়িবাঁধা হাতে নেমে
বা পকেটে থাকে থেমে
চোটপাট করে চলে
চলে জোর পায়।


আমি চেয়ে দেখি আর
ভেবে মরি বারবার
আমার বাড়ির দিকে
কেন ছুটে যায়?


আ-রে আ-রে ব্যাপার কি
লোকটা কি ক্ষ্যাপা না কি,
আমার বাড়ির দোরে
কড়া নাড়ে দেখি;


কড়া নাড়ে আর চলে;
সব কোথা গেলো চলে?
কারো কোনো সাড়া নেই...
রেগে বলে এ কি!


কেবল ভাবতে থাকি
লোকটা কি চেনা নাকি?
দরজাটা খুলে গেলো
এমন সময়।


এসো জোর পায়ে হেঁটে
লোকটার পাশ কেটে
ঘরে ঢুকে দাঁড়িয়েই
পেয়ে যাই ভয়।


ঘরের দেয়ালে রাখা
আয়নাতে দেখি বাঁকা
মুখ করে সে লোকটা
পাকিয়ে দু'চোখ।


তাকিয়ে রয়েছে যেন
তারপর যেন কেন
ফিক করে হেসে ফেলে
তাকায় যে লোক।


ডান হাতে খাতা আর
বই বুকে চাপা তার
খাতার মলাট চোখ
কেটে গেল জিভ,


মলাটের মাঝখানে
বেশ সোজা টানে টানে
লেখা আছে নাম তার
আহসান হাবীব।