"আশালতা নামটা খুব সুন্দর।"
"হুম, মন্দ না। পুরোন কালের গন্ধভরা।"
"গন্ধটা অনেকটা সিন্দুকে লেপ কম্বলে রাখা ন্যাফথালিনের মতন
অথবা শীতকালের গ্লিসারিনের মতন।"


বিস্মৃত ভু-ত্বক জুড়ে উপশমের হাতছানি।


"কণ্ঠস্বরের কত স্তর আছে, জানো ?"
"ঠিক গুনিনি।  তুমি ঠিক জানো ?"
"আশালতার জন্য শুধুমাত্র একটি স্তর। ভেষজ শরীর জুড়ে তৃনার গল্প।
যে তৃনা বলতেন, সংসারের ঠোকাঠুকিতে অনল-তরল সবই উপস্থিত বুদ্ধির পরাকাষ্ঠা মাত্র !"
"বেশ শোনালো কিন্তু! আজ আসি ? এলাম।"


বেলাল হাঁটছিলেন করিডোর ধরে।
হাসপাতালের মেঝে থেকে জীবাণুমুক্তির একধরণের প্রত্যয়কারী
গন্ধ আসতে থাকে সবসময় ,
ভেতর পর্যন্ত গা গুলোতে থাকে তার নিশ্চয়তায়। অস্বস্তিকর।


নাজমা একটি অদ্ভুত অধ্যায় বেলালের জীবনে। জীবনে বাঁধা পড়েননি , তবু তিনি জানেন, তিনি অবশ্যই নাজমার জন্য প্রথম দর্শনার্থী হবেন নাজমার প্রত্যেকটি অসুস্থতাকালে। অদ্ভুত সামাজিক হৃদ্যতা। যা অহেতুক প্রচ্ছন্নের আর নিভৃতের এক অনুভূতি।


আশালতাকে নিয়ে তাঁর মস্তিষ্কেও একটি গল্প তৈরী হচ্ছিলো। খুব চেনা, খুব বেশী অদরকারী , হাঁটতে থাকা এই করিডোর জুড়ে রোদের ছুঁয়ে থাকা প্রতিটি মুহূর্তে।


"পুঁথির মালাটা সুন্দর , না?"
"হ্যাঁ।"
"নেবে, দাদাভাই ?"
"কে, আমি ? না।"


ছোট ছোট শব্দ। অনুচ্চারিত রক্তক্ষরণের মতন।
ছোট ছোট অপেক্ষার মতন।  দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা মুহূর্তে।
যুগান্তকালের প্রতীক্ষার মতন, যা একসময় সময়ক্ষেপণের উদ্দেশ্যের মাহাত্ম্যকেও হারিয়ে ফেলে।


সুন্দরের প্রয়োজন এই পৃথিবীতে শাশ্বত কালের , প্রয়োজন শক্তির শ্রেষ্ঠত্বও।
অথচ অসুন্দর এ পৃথিবী থেকে লোপ পায়নি , লোপ পায়নি দুর্বল, অনাহারী মানুষেরাও।


অবেলায় মনে হতে থাকে,
ইন্দির ঠাকরুন মৃত্যু বরণ করেন বোঝা আর না বোঝার কোনো সুক্ষ সুতোর মত ঝুলতে থাকা সময়ে।