সাহিত্যের বার-বনিতা আমি


ঠাকুর বিশ্বরাজ গোস্বামী


এমন করে আমার বাসর ঘরে
কড়া নেড় না
আমি  তোমাদের সকলকেই চাই
একান্ত ভাবে
দেখনা
এখনো রবির কিরণ এখনো বাসর ঘরে,
আরো আছে
নজরুল, জীবনানন্দ, সুকান্ত  ৷
বাসর শেষ না হতেই
শেক্সপিয়ার এসে
আমাকে করে সাহিত্য রসে
গভীর ভাবে মগ্ন ৷
কিন্তু
মনের ঘরে উঁকি দেন
দান্তে
বেশ ছিলাম ,
ওদের মাঝে নিজেকে হারিয়ে ।
স্যামুয়েল ল্যাঙ্গাহোর্ণ ক্লিমেন্স
মার্ক টোয়েন
চিন্তা কোষে দেন ধাক্কা
আমি আনি তাকে আমার সাহিত্য বাসরে
আরো গভীর হয়
সাহিত্য বিলাস তৃষ্ণা ৷
ওদের বর্ণমালার চরণ ধৈত করি
ঐচ্ছিক সাগর জলে ৷
মনে পরে
মিগেল দে থের্ভান্তেস
সাভেন্দ্রার সৃষ্টির কথা
যাই অক্ষর মেলায়
নিয়ে আসি বাসর ঘরে
বেশ আনন্দদায়ক তার
সে বর্ণ বিহার
আনন্দের মাঝে আরো ঘনিভূত করেন
ফিওদর দস্তেয়েভিস্ক
আমি ভেসে যাই আনন্দধারায়  ৷
স্মৃতির কপাট খুলে আসেন
ফ্রানৎস কাফকা
দিতে থাকে কাব্য-প্রেম সুধা
আমি হয়ে যাই
গদ্য সাহিত্যের সুধাকর ,
যদিও আগে ছিলাম
শরৎ প্রেম সাগরে ৷
সাহিত্যে মুক্তা খুঁজি থাকি
শব্দ সাগরে
পায়ে যাই চার্লস ডিকেন্স-কে
তিনি  আমাকে  করেন
সাহিত্যের-দ্বিচারিনী ৷
তাইতো আমি
কল্পনার সিঁড়ি বেয়ে
চলে যাই
লিও তলস্তেয়ের নিকট
তার বর্ণমালা পরি গলে,
এমন সময়
জন মিলটন এসে
আমাকে বানিয়ে দেন
কাব্যপ্রেম অনুরাগী
বেড়ে যায় সাহিত্য বিরহ জ্বালা ,
জ্বালা মিটাতে যাই  
ইচ্ছার গাড়ীতে গ্রন্থ মেলায়
নিয়ে আসি
হেনরিক ইবসেনের সৃষ্টি
ডুবে থাকি নাট্যরসে ,
ইচ্ছার আগুন দ্বিগুন বেড়ে যায়,
আগুন নিভাতে হোমার-কে আনি
আমার সাজানো সাহিত্যের ফুলসজ্জায়
কিন্তু না
আগুন নিভলো না
বরং
জ্বলন্ত আগুনে ঘি ঢালা হলো  ৷
তাই আমি
ভিক্টর হুগোর নিকট যাই আগুন নিভাতে
তার সঙ্গে  সঙ্গ করায়
সাহিত্য  বিরহ আমাকে
কুঁড়ে কুঁড়ে খাওয়া শুরু করে ৷
বিরহ জ্বালা বুকে নিয়ে
এডগার এলান পো-এর নিকট এলাম
তিনি আসেন আমার সাহিত্য বাসরে,
বাসর চলছে  
আঁখির আলোক সজ্জায় ,
বিভোর আমি ,
এর-ই ফাঁকে
জোহান উলফগ্যাং গ্যাটে
অামার মনকে করেন আকর্ষণ
তবুও
পাবার সাধ মিটলো না
পরিশেষে
শার্ল পিয়ারে বদলেয়ারকে
খুঁজে পাই  ক্লেদজ-কুসুম বর্ণমালায় ,
আমি হারিয়ে যাই
গদ্যময় কবিতার প্রেমে
কবিতা হয়ে যায় আমার সহচারী ,
সহচারীর প্রেম আমাকে করে পাগলিনী  ।
পাগলিনী হয়ে খুঁজতে থাকি
সাহিত্য প্রেমিক
স্মৃতির সিঁড়ি বেয়ে যাই
দা ভিঞ্চি কোডে ড্যান ব্রউন-এর নিকট
আমি মুগ্ধ তার কলমঠোঁটে বর্ণমালায়
বর্ণমালা সুবর্ণবাসরে ,
সাহিত্য জ্ঞান-সাগরে
মানসতরী বেয়ে যাই আমি
আদ্রে জিদ-এর নিকট
তিনি আমাকে করেন ভিষণ তৃষ্ণার্ত
তৃষ্ণা  মিটাতে আনি
আলেকজান্ডার সলজেনিৎসিন-কে
তৃষ্ণায় কাতর হই আরো
এই দেখে
সাহিত্যরস নিয়ে আসেন
টমাস মান ,
আকন্ঠ পান করি তার সাহিত্য রস,
এরপরও
মন ফিরে চায় বাংলার দিকে
আমার চাওয়া দেখে
মাইকেল মধুসূদন দেন
অমৃতাক্ষর জ্ঞান,
এমনি সময়
প্রবোধ সানের আসেন আমার স্মৃতিতে
আমি আনি তাকে
আমাকে নামিয়ে দেন
ছন্দ-সাগরে
সে সাগরে নেমে আমি
নিজেকে করি ধৌত
আমাকে আবার
কূলে তোলেন
বৈষ্ণব কবি পেরিচাঁদ
তার ছন্দের জালে আমি ফেসে যাই
আমাকে সে জাল থেকে
মুক্ত করেন
সাধক কবি চন্ডিদাস
তার ছন্দের দোলায় দুলছিলাম বেশ,
সেই দোলায় আরো দোল দিতে থাকে
ছন্দের যাদুকর কবি সতেন্দ্রনাথ দত্ত,
সকলের জ্ঞান বীজ ধারণ করে
আজ আমি মানস-গর্ভা,
সত্যি আমি এখনও
সাহিত্যের বার-বনিতা  ৷


লেখা
21-2-2011
মঙ্গলবার
সময়
11-00 Pm
গোপালগঞ্জ ।