।আমরা ওরা।


রথীনদার বউয়ের সাথে গিন্নীর
আজকেও লেগে গেলো।।
ওরা পড়শি, যদিও বঁড়শি বলা ভালো,
বিঁধে আছে গলাতে প্রায় বিশটা বছর।
পাঁচিলের ইঁটগুলো জানে, আমরা আর ওরা,
পাশাপাশি থাকি বটে, ঘেঁষাঘেষি নেই।


অবশ্য পুজো এলে ব্যাপার আলাদা।
শক্তিসংঘতে আমি সেক্রেটারী, রথীনদা ট্রেজারার,
যুদ্ধটা তখন আমাদের সাথে ওপাড়া’র,
‘ আমরা কজন’ কে হারিয়ে সেরা পুজো হওয়ার
আনন্দ চেটেপুটে নিই দুই জনে।


সেই যে বার
বিসর্জনের টক্কর লাগলো মহরমের সাথে,
তখন  মসজিদের মৌলবীর সাথে মিটিং ঠিক হলো।
ও পক্ষে ওরা মুসলমান, আর এদিকে আমরা,
শক্তিসংঘ আর আমরা ক’জনের সম্মিলিত কমিটি।
ঝামেলা হয়নি একটুও,
তাজিয়া বিজয়া একসাথে দিব্যি হলো বিনা খিটিমিটি।


ক’বছর আগের শহরভাসী বৃষ্টির কথা মনে আছে?
উঁচু বলতে তো এদিকে ওই ঠাকুরদালান আর মসজিদ,
সব কটা মানুষকে সেখানে ঠেসেঠুসে তুলেছিলাম বানের সময়,
বন্যা নামলে , মৌলবী সাহেব বুকে চেপে বলেছিলেন,
‘আমরা পারলাম আজকে সবাইকে বাঁচাতে,
এড়ানো গিয়েছে আজ বড় বিপর্যয়!’


এইভাবে প্রতি উৎসবে আর বিপর্যয়ে,
ক্রমাগত নানান আমরা আর ওরা’য় ভাগ হয়ে চলেছি।
প্রবাসে গেলে আমরা বাঙালী ,
বিদেশে গেলে আমরা ভারতীয়
হিন্দুর উৎসবে আমরা ছোটোজাত,
ইসলামী উৎসবে আমরা হিন্দু ,
গুজরাটে আমরা বিহারী,
উত্তরভারতে আমরা সাউথ ইন্ডিয়ান....
আবার আয়নার উল্টোদিকে গেলে
ভিন্ন চক্ষুতে এই আমরা’ই ওরা হয়ে যায়।


আর আমরা বনাম ওরা’তে
ইতিহাসকাঁপানো রক্তের নদী বয়ে যায়।


আর্যতীর্থ